অনুপ্রেরণার গল্পঃ আপনার ব্যবহারই আপনার পরিচয়ঃ

অনুপ্রেরণার গল্পঃ আপনার ব্যবহারই আপনার পরিচয়ঃ একজন মানুষের পরিচয় পাওয়া যায় তার ব্যবহার দেখে। কোন মানুষ কতটা শিক্ষিত, বা আদৌ শিক্ষিত কিনা,  তিনি কোন পেশায় নিযুক্ত , বা তিনি কত বেশি ধনী, এ সব কিছুই কোন ব্যক্তির আসল পরিচয় নয়। আপনি আপনার সামনের ব্যক্তির সঙ্গে কিরূপ আচরণ করছেন তা দিয়েই পরিমাপ করা হয় আপনি মানুষটা ঠিক কত বড় মানুষ । অর্থাৎ আপনার ব্যবহারই হল আপনার পরিচয়। নীচের এক অতি সাধারন গল্প থেকে ব্যাপারটা আরও  সহজে উপলব্ধি করা যাবে… … …

 

আপনার ব্যবহারই আপনার পরিচয়ঃ এক রাজার গল্পঃ

 

 ব্যবহারই আপনার পরিচয়ঃ

 

এক ব্যক্তি এক রাজার দরবারে গেল। সে রাজাকে প্রণাম করে বলল, “মহারাজ আমাকে আপনার দরবারে একটা চাকরি দিন।

রাজামশাই অবাক হয়ে ভাবলেন  , এ আবার কে রে ? হুট করে কোথা থেকে এসে চাকরি চাইছে ! চিনি না , জানি না! ” তা বাপু তোমার পরিচয়টা আগে দাও তো , তারপর চাকরি চাইবে ।”

আজ্ঞে রাজামশাই আমি ভোলা , আমি আপনার পাশের রাজ্যেই থাকি

তা বাপু , আমি তোমাকে  চাকরি দেবো কেন ? তোমার মধ্যে কি এমন গুনাগুণ আছে যে তোমাকে চাকরি দিতে হবে ?

আজ্ঞে রাজামশাই, আমি কোন ব্যাক্তির মুখ দেখে বলে দিতে পারি যে ব্যক্তিটি কেমন। 

ও হো !  তাই নাকি ! না বাপু , আপাতত কারও মুখ দেখে বলতে হবে না ! ঢের হয়েছে ! বর্তমানে  আস্তাবলের  ম্যানেজারের পদটা খালি আছে , ওখানে লেগে পরতে পার। পরে তোমার কাজকর্ম দেখিয়ে যদি আমাকে খুশি করতে পারো তো , তখন অন্য কিছু ভাবা যাবে। এই বলে রাজামশাই তাকে আস্তাবলের ম্যানেজার করে রাখলেন।

একদিন রাজামশাই ভোলাকে ডেকে বললেন , ” কি ভোলা , কাজকর্ম কিরকম চলছে?”

আজ্ঞে,  ভালোই চলছে রাজামশাই ।

” আচ্ছা ভোলা , তুমি বলেছিলেনা ,  যে , তুমি মুখ দেখে বলে দিতে পার কে কেমন ব্যক্তি। তা আমার প্রিয় ঘোড়া সম্পর্কে তোমার কি মতামত ?” 

ভোলা বলল , ” রাজামশাই অপরাধ নেবেন না, আপনার ঐ প্রিয় ঘোড়া ঠিক ঘোড়া নয় । এটাকে সঠিক অর্থে ঘোড়া বলা যায় না। ঘোড়ার মত দেখতে হলেও ওটা গরুর মত আচরণ করে।” 

“তার মানে ? কি বলতে চাইছো তুমি ? আমার প্রিয় ঘোড়া ঘোড়া নয় ! একি মগের মুলুক নাকি ! এই প্রহরী , যাও , ডেকে আনো ঘোড়ার মালিককে , যার থেকে ঘোড়া কেনা হয়েছে।”   “না না , এ আমি কোন ভাবেই মেনে নেব না । এই ভোলা , তুমি শূলে চড়ার জন্য প্রস্তুত থেকো, তোমাকে আমি ছাড়বো না।”

ঘোড়ার মালিক এলো । এসে বলল , ” রাজামশাই , এই ঘোড়া জন্মাবার সাথে সাথেই এর মা মারা যায় । একে আমরা গরুর দুধ খাইয়ে , গরুদের সাথে,  গোয়াল ঘরে বড় করে তুলেছি। রাজামশাই , মাপ করবেন , ঘোড়াটা কোন সমস্যা করলো নাকি?”

” না না , সমস্যা করবে কেন? তা ভোলা , বাপু , তুমি বুঝলে কি করে?” রাজা বললেন।

‘আসলে রাজামশাই,” ভোলা বলল,  “যে কোন ঘোড়া ঘাস খেয়ে উপর দিকে মুখ করে জাবর কাটে । কিন্তু আপনার এই ঘোড়া ঘাস খাবার পর গরুর মত নিচের দিকে মুখ করে জাবর কাটে।”

“বা বা ! তোমার তো বেশ বুদ্ধি ! তুমি তো খুব কাজের লোক ! আজ থেকে তোমাকে আর আস্তাবলে কাজ করতে হবে না, তুমি আমার অন্দরমহলে কাজ করবে।” রাজামশাই খুশি হয়ে বললেন । তিনি মন্ত্রিকে ডেকে বললেন, “ মন্ত্রি ভোলাকে আমার খামার থেকে বেশ ভালো দেখে চারটে মুরগি , আর দুটো পাঁঠা দিয়ে দাও পুরষ্কার হিসাবে।” 

এর আরও কিছুদিন পর একদিন রাজামশাই ভোলাকে রাজসভায় ডেকে পাঠালেন । তিনি খুব কৌতূহলের সঙ্গে ভোলাকে জিজ্ঞেস করলেন, “কি ভোলা , এতদিন তো অন্দরমহলে কাটালে, তা আমার রানীকে  দেখে কি বুঝলে? আমার রানী কোন বংশের কন্যা বলে তোমার মনে হয়?” 

ভোলা বলল, ” রাজামশাই , অপরাধ নেবেন না। রানীমা চাকর-বাকরের সঙ্গে যে রকম ব্যবহার করেন তাতে মনে হয় উনি উচ্চ বংশের মেয়ে নন।” 

” কি বলছ তুমি?” রাজামশাই প্রচণ্ড রেগে গিয়ে বললেন, “ আমি উচ্চ রাজবংশের রাজকন্যাকে বিয়ে করেছি !  ঠিক আছে, যাচাই করে দেখা যাক ! এই প্রহরি এখুনি আমার শাশুড়ি মাকে ডাকো।” 

শাশুড়ি মা এলেন। উনি রাজামশাইকে  বললেন, ” বাবা, আমার স্বামী আর তোমার বাবা দুই বন্ধু ছিলেন। ওনারা পরস্পরকে কথা দিয়েছিলেন যে আমার কন্যার সাথে তোমার বিয়ে দেবেন । কিন্তু আমার কোন কন্যা সন্তান জন্মাবার আগেই তোমার শ্বশুরমশাই মারা যান । তাই ওনার কথা রাখতে আমি একটি কন্যা সন্তানকে দত্তক নিয়েছিলাম। তবে আমি তার বংশ পরিচয় কি ছিল বলতে পারব না। বাবা, তোমাকে এতদিন এই কথা জানায়নি। আমাকে ক্ষমা  কোর।” 

এই কথা শুনে রাজামশাই এর ভোলার প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গেল। তিনি মন্ত্রিকে আদেশ দিলেন ভোলাকে আরও বেশ কিছু হাঁস , মুরগি উপহার দিতে। 

এবার রাজা ভোলার দিকে তাকিয়ে বললেন ,” ভোলা , আমার যে তর সয়ছে না! তুমি এবার আমার সম্পর্কে কিছু বল ।” 

“মহারাজ আগে কথা দিন , আমার প্রাণ দান করবেন।”

“ঠিক আছে। কথা দিলাম। তুমি বলে ফেল।” রাজামশাই বললেন।

” মহারাজ, আপনি রাজার পুত্র নন।” ভোলা ভয়ে ভয়ে বলল।

রাজামশাই রেগে গেলেন। এত বড় কথা ! তিনি তাঁর অসুস্থ পিতার কাছে ছুটলেন । পিতাকে সব কথা বললেন।

রাজার বাবা বললেন, “আমার কোন পুত্রসন্তান ছিল না। তাই রাজ্যের উত্তরাধিকার হিসাবে তোমাকে দত্তক নিয়েছিলাম। আমার মনে হয় আমি কোন ভুল করিনি। কারন তুমি একজন যোগ্য রাজা , এটা প্রমাণিত।”

রাজা ভোলার মানুষ চেনার  ক্ষমতা দেখে অভিভূত । তিনি ভোলাকে বললেন, “তুমি জানলে কিভাবে যে আমি রাজার পুত্র নোই?” 

ভোলা শান্তভাবে জবাব দিল ,” মহারাজ, আপনি যতবারই খুশি হয়ে আমাকে উপহার দিয়েছেন, ততবারই শুধু হাঁস , মুরগি , গরু , ছাগল দিয়েছেন। আপনি যদি রাজবংশের পুত্র হতেন, তবে এগুলো না দিয়ে সোনা , হীরে , জহরত দিতেন।” 

এই কথা শুনে রাজামশাই এবং অন্যান্য সভাসদরা একত্রে বলে উঠলেন , তার মানে, আপনার ব্যবহারই আপনার পরিচয়। 

 

শিক্ষাঃ আপনার ব্যবহারই আপনার পরিচয়ঃ

মানুষের আচরণ দেখে সহজেই অনুমান করা যায় , যে , সে কেমন মানুষ । আপনার ধনসম্পত্তি বা বংশ পরিচয় আপনার  পরিচয় নয়। আসল পরিচয় হল আপনার ব্যবহার। তাই প্রত্যেক মানুষের উচিত নিজের ব্যবহার ঠিক রাখা।। 

আরও পড়ুন … … … 10 টি best শিক্ষামূলক গল্প

 

Leave a Comment

Solverwp- WordPress Theme and Plugin