অনুপ্রেরণার গল্প – Inspiring 10 stories

অনুপ্রেরণার গল্প: এখানে 10 টি বিভিন্ন শিক্ষনীয় অনুপ্রেরণার গল্প দেওয়া হল, যা  পড়লে আপনারা জীবনে চলার পথে সঠিক ভাবে এগোনার দিশা পাবেন। কখনও পথভ্রষ্ট হলে , পথ ফিরে পাবার রসদ পাবেন। নিচের অনুপ্রেরণার গল্পগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে , শুধু নিজে নয়, অপরকেও অনুপ্রাণিত করবেন এই আশা রাখি। আসুন নিচের 10 টি অনুপ্রেরণার গল্প পড়ে ফেলা যাক … … … 

 

অনুপ্রেরণার গল্প – (১) পেলিকান পাখির গল্প (অতিরক্ত নির্ভরশীলতা)

 

অনুপ্রেরণার গল্প (পেলিকান পাখির গল্প)
অনুপ্রেরণার গল্প (পেলিকান পাখির গল্প)

 

ক্যালিফোর্নিয়ার মন্তেরি শহরের পশ্চিম উপকূল বরাবর পেলিকান নামে লম্বা ঠোঁটওয়ালা এক ধরনের পাখির বাস ছিল। এদের প্রধান খাদ্য ছিল সমুদ্রের মাছ। তারা তাদের লম্বা ডানা দিয়ে সমুদ্রের জলের পৃষ্ঠ বরাবর উড়ে যেত এবং মাছ শিকার করত। 

কিন্তু , লোকাল জেলেদের বদান্যতায় তাদের জীবনে এক পরিবর্তন এলো। জেলেরা মাছ ধরে বিক্রি করার আগে, সেগুলোর নাড়িভুঁড়ি সহ বাতিল অংশগুলো পেলিকান পাখিদের উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে দিত। সেগুলো পাখিরা মজা করে খেত। এই ঘটনা প্রতিদিন চলতে থাকত , আর পাখিরা কষ্ট করে মাছ শিকার করার পরিবর্তে বসে বসে জেলেদের দেওয়া মাছের নাড়িভুঁড়ি খেত। এইভাবে তারা এক সহজ, আরামদায়ক জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পরল। 

দিনের পর দিন এই ঘটনা ঘটতে থাকল এবং পেলিকান পাখি এক অলস ও মোটা পাখিতে পরিনত হল। তারা সম্পূর্ণরূপে জেলেদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ল এবং উড়তে ভুলে গেল। 

কিছুদিন পর জেলেরা মাছের নাড়িভুঁড়ির অন্য এক ব্যবহারিক দিক আবিষ্কার করল এবং সেগুলো এখন থেকে ফেলে না দিয়ে বিক্রি করতে শুরু করল। 

জেলেদের এই পরিবর্তন পাখিদের কাছে অজানা ছিল। তারা দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ,  নাড়িভুঁড়ির আশায় বসে থাকল, কিন্তু জেলেদের কাছ থেকে কোন খাবার পেল না। ততদিনে, উড়তে ভুলে যাওয়ায় , মাছ শিকার করার তাদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি  তারা হারিয়ে ফেলেছে। তাই খাবার না পেয়ে তারা মরতে শুরু করল।  এইভাবে ক্যালিফোর্নিয়ার মন্তেরি শহরের পশ্চিম উপকূল থেকে পেলিকান পাখি বিলুপ্ত হয়ে গেল।

 

শিক্ষাঃ পেলিকান পাখি বিলুপ্ত হয়ে গেল সমুদ্রে মাছের অভাবের জন্য নয়, জেলেদের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পরার কারনেই তাদের বিলুপ্তি ঘটল। তাই, নিজের ক্ষমতার উপর বিশ্বাস রেখে সহজাত কাজ কর্ম করে জীবনে চলা উচিত । কারও উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা ধ্বংস ডেকে আনে।। 

আরও পড়ুন … … … নিজেকে জানুনঃ অনুপ্রেরণার গল্প

 

অনুপ্রেরণার গল্প- (২) পদ্মিনী মুথুস্বামীর বক্তৃতা (মনের পরিচর্যা )

 

অনুপ্রেরণার গল্প- পদ্মিনী মুথুস্বামী
অনুপ্রেরণার গল্প- পদ্মিনী মুথুস্বামী

 

পদ্মিনী মুথুস্বামী, একজন সমাজকর্মী , মঞ্চে বক্তৃতা দেবার সময় বস্তির এক খোঁড়া ছেলের গল্প বলতে  শুরু করলেন। খোঁড়া ছেলেটিকে দেখে তাঁর মায়া হল। তিনি ছেলেটিকে বস্তি থেকে নিয়ে তার পা ভালো করার চেষ্টা করলেন। ভেল্লরের এক নামকরা অর্থোপেডিককে  দেখালেন। তিনি ছেলেটির চিকিৎসা করতে রাজি হলেন। কয়েকবার অপারেশনের পর আশ্চর্যজনক ভাবে ছেলেটি হাঁটতে শুরু করল, তারপর দৌড়াল , এবং শেষে তার বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা শুরু করল।

বছর কেটে গেল। ছেলেটি আস্তে আস্তে বড় হতে থাকল। এখন সে একটা পূর্ণাঙ্গ  মানুষ । 

এইটুকু বলে পদ্মিনী একটু থামলেন। তিনি তাঁর শ্রোতাদের দিকে একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন, “আপনারা বলতে পারবেন, এখন সে কি করছে?” 

শ্রোতারা তাদের বিভিন্ন মতামত জানালো । কেউ বলল, সে একজন ডাক্তার , কেউ বলল শিক্ষক , সমাজকর্মী বা একজন শিল্পপতি। একজন বলল, সে একজন দৌড়বিদ। 

কিন্তু,  সকলকে অবাক করে পদ্মিনী জানালেন ,” না, আপনারা সকলেই ভুল, সে এখন সেন্ট্রাল জেলে আছে —- একটি খুনের মামলার প্রধান আসামী।” 

সবাই স্তব্ধ হয়ে গেল। পদ্মিনী অনুশোচনা করতে থাকলেন, ” আমরা সকলে তাকে শেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম যে  কিভাবে হাঁটতে হয়, কিন্তু আমরা তাকে কখনই শেখাইনি যে কোন পথে হাঁটতে হয়। আমরা  তাকে physically strong করতে জোর দিয়েছিলাম, আমরা তাকে moral ও spiritual শিক্ষা দিই নি।” 

 

শিক্ষাঃ এই গল্প থেকে শিক্ষা পাওয়া যায় যে, শরীরকে সুস্থ্য রাখাই যথেষ্ট নয়, মনকে সুস্থ্য  করে তুলতে হবে।। 

 

আরও পড়ুন … … .. 3 best বাংলা মোটিভেশনাল স্টোরি

 

অনুপ্রেরণার গল্প – (৩) উড়ন্ত হাতি ( ইচ্ছাশক্তি )

 

অনুপ্রেরণার গল্প- উড়ন্ত হাতি
অনুপ্রেরণার গল্প- উড়ন্ত হাতি

 

এক ঘন সবুজ জঙ্গলে, দুই বন্ধু , এক ময়না আর একটি  হাতি বাস করত। বন্ধুকে স্বাধীনভাবে উড়তে দেখে হাতির মনেও ওড়ার ইচ্ছা জাগত। একদিন সে ময়নাকে তার মনের ইচ্ছার কথা জানাল। “আমার , তোমার মত উড়ে বেড়ানোর খুব ইচ্ছা।  আমি তোমার মত গাছের উপর দিয়ে, নদীর উপর দিয়ে উড়ে বেড়াতে চাই। তোমার কি মনে হয়, আমি উড়তে পারব ?” 

ময়না নিজের উপর আস্থায় বিশ্বাসী ছিল । সে একটা বুদ্ধি খাটাল । তার দেহ থেকে একটা পালক খুলে নিল। সেটা হাতিকে দিয়ে বলল, ” এই পালকটা নাও। তোমার মুখ দিয়ে ধরে থেকো , আর তোমার কান দুটো ঝাপটাতে থেকো , দেখো, তুমি ঠিক উড়তে পারবে।” 

বন্ধুর প্রতি অটুট বিশ্বাস রেখে,  হাতি  শক্ত করে পালকটি  তার মুখে ধরল এবং প্রবলভাবে কান দুটো ঝাপটাতে শুরু করল। আশ্চর্যজনকভাবে হাতিটি উড়তে লাগল। সে নদী, নালা, মাঠ বরাবর উড়ে চলল । আনন্দে তার মন ভরে গেল। 

মাটিতে পা দিয়ে হাতি ময়নাকে ধন্যবাদ জানাল এবং বলল , “তোমার এই পালকটার জন্য আমি উড়তে পারলাম। তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ!” 

ময়না বলল, ” ঐ পালকটা! তুর! ওটাতো একটা পুরানো পালক! ওটা তোমার কোন কাজেই লাগেনি। ওড়ার জন্য তোমার মনের প্রবল ইচ্ছাশক্তিই তোমাকে উড়তে সাহায্য করেছে।” 

 

শিক্ষাঃ আমরা প্রায়ই আমাদের সাফল্যের জন্য বাইরের শক্তিকে কৃতিত্ব দিই। কিন্তু সেটা ঠিক নয়। আমাদের মানসিক শক্তিই আমাদের সফলতার প্রধান কারন।। 

 

আরও পড়ুন … … … গল্প থেকে শিক্ষা : Negativity inside us

 

অনুপ্রেরণার গল্প – (৪)  শেষ পাতা (ছোট্ট প্রচেষ্টা , গভীর প্রভাব)

 

অনুপ্রেরণার গল্প - শেষ পাতা
অনুপ্রেরণার গল্প – শেষ পাতা

 

(O.  Henry -এর “The Last Leaf” গল্প অবলম্বনে) :

জন্সি ও স্যু নামে দুই তরুনী চিত্রশিল্পী একটা বাড়ির দোতলায় ভাড়া থাকত । ঠিক তার নিচের তলার ঘরে বেরম্যান নামে এক বয়স্ক চিত্রশিল্পী থাকতেন। বেরম্যান ছিলেন একজন ব্যর্থ শিল্পী। তাঁর জীবনে চিত্রশিল্পী হিসেবে তিনি প্রতিষ্ঠিত হতে পারেননি । তবে তাঁর স্বপ্ন ছিল যে , একদিন তিনি তাঁর সেরা চিত্র অঙ্কন করে সুনাম অর্জন করবেন।

বেরম্যান উপরতলার দুই তরুন মহিলা চিত্রশিল্পীকে খুব স্নেহ করতেন। এক বর্ষার মরশুমে শহরে নিউমোনিয়ার প্রকোপ দেখা দিল। জন্সিও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হল। তার শরীর ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকল। সে বাঁচার আশা ত্যাগ করল। ডাক্তারবাবু স্যুকে বললেন  ,” জন্সির বাঁচার কোন ইচ্ছা নেই। তাই কোন ওষুধ কাজ করছে না। ও যদি বাঁচতে না চায় , তবে ওকে বাঁচানো যাবে না।” 

স্যু লক্ষ্য করল জন্সি জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে, আর কিছু একটা গুনছে —- এগারো , দশ , নয়… ।

তাকে জিজ্ঞেস করায় সে বলল, স্যু দেখ, জানালার বাইরে  পাঁচিলের গায়ে এক আইভিলতা আছে। তার শিকড় মারা গেছে। আমি তিন দিন আগে দেখেছি ওতে প্রায় ১০০ পাতা ছিল । কিন্তু বর্ষার জল আর হাওয়ার কারনে সব পাতা ঝরে মাত্র ৮ টা পাতা আছে। ঐ আইভিলতার সাথে সাথে আমিও মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছি । যেদিন ঐ গাছের শেষ পাতা ঝরে যাবে, সেদিন আমিও মারা যাব। 

বেরম্যান,  স্যুর কাছ থেকে জন্সির মানসিক আর শারীরিক অবস্থার কথা জেনে খুব দুঃখ পেল। সে স্যুকে  তাদের ঘরের জানালা বন্ধ করে রাখার পরামর্শ দিল। সেইমতো স্যু জানালা বন্ধ করে রাখল।

পরদিন সকালে জন্সি জানালা খোলার জেদ ধরল। স্যু ভয়ে ভয়ে জানালা খুলে দিল। কিন্তু , অদ্ভুতভাবে তারা দেখল, আইভিলতার শেষ পাতাটা তখনও গাছের ডালে আটকে আছে —- ঝরে যায়নি । জন্সি লক্ষ্য করল, সারাদিন প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টিতেও শেষ পাতাটা গাছের সঙ্গে আটকে আছে।

পরদিন সকালে তড়িঘড়ি ঘুম থেকে উঠে জানালা খুলল জন্সি। অবাক হয়ে তারা দেখল, পাতাটা তখনও বেঁচে আছে। স্যু তাকে বোঝালো যে ওই আইভিলতার শেষ পাতার মতো জন্সিও বেঁচে থাকবে। তার কথা শুনে জন্সির মনে বাঁচার ইচ্ছা ফিরে এল। তার ওষুধ কাজ করতে শুরু করল।

পরদিন ডাক্তারবাবু এসে  জন্সিকে দেখে অবাক হয়ে গেলেন। তবে, তিনি একটি খারাপ খবর দিলেন। তিনি জানালেন, নিচের তলার বেরম্যান পরশু রাতে বৃষ্টির জলে ভিজে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন, এবং আজ সকালে তিনি মারা গেছেন।

জন্সি পুরোপুরি ভালো হয়ে যাবার পর, পাঁচিলের দেওয়ালের আইভিলতার শেষ পাতাটা দেখতে গেল। কিন্তু, সে দেখল, এটা কোন আসল পাতা নয়, তুলি আর রং দিয়ে নিখুঁতভাবে  আঁকা এক অসাধারণ চিত্রকলা , যা তার জীবন বাঁচাতে সাহায্য করেছে! তার বুঝতে অসুবিধা হল না যে, বেরম্যান মৃত্যুর আগে তার  জীবনের সেরা শিল্পকর্মের মধ্য দিয়ে একটি সম্ভাবনাময় জীবন বাঁচিয়ে দিয়ে গেছে।  

 

শিক্ষাঃ জীবনের অন্ধকার সময়ে আশায় হল একমাত্র ভরসা। আর আমাদের এমন কাজ করা উচিত , যা মানুষের মনে আশার সঞ্চার ঘটাবে ।।

 

আরও পড়ুন … … ... অনুপ্রেরণার গল্পঃ আপনার ব্যবহারই আপনার পরিচয়ঃ best story

 

অনুপ্রেরণার গল্প – (৫) শীতের গাছ (প্রত্যাবর্তন )

 

অনুপ্রেরণার গল্প - শীতের গাছ
অনুপ্রেরণার গল্প – শীতের গাছ

 

এক শীতের সকালে, প্রচণ্ড ঠাণ্ডায়, রবার্টের ঘরে Fire-wood জ্বালানোর প্রয়োজন হয়ে পড়ল । তাই সে শুকনো কাঠের খোঁজ করতে শুরু করল । জঙ্গলে সে একটা শুকনো গাছ দেখতে পেল, যাতে প্রাণের কোন চিহ্ন ছিল না। গাছটির সব পাতা ঝোরে গিয়েছিল, আর সরু শুকনো ডালপালাগুলো মটমট করে ভাঙা যাচ্ছিল । রবার্ট করাত দিয়ে গাছটির গোড়া  থেকে কেটে ঘরে আনলো এবং আগুন জ্বালালো । 

এরপর, এক বসন্তের সকালে রবার্ট জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছিল । হঠাৎ তার চোখ গিয়ে পড়ল সেই গাছের গুঁড়ির উপর, যেটা সে মৃত মনে করে করাত দিয়ে কেটে নিয়ে গিয়েছিল । সে দেখল, সেই গুঁড়ির উপর থেকে পুনরায় নতুন পাতা অঙ্কুরিত হয়েছে। সে অবাক হয়ে ভাবল , যে গাছটিকে সে মৃত মনে করেছিল, আপাতদৃষ্টিতে তা মৃত মনে হলেও , তার শিকড়ে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল ।  তাই, বসন্তের অনুকুল আবহাওয়ায় গাছটি নিজেকে পুনরায় বিকশিত করেছিল। 

 

শিক্ষাঃ গল্পটি আমাদের শিক্ষা দেয় যে, শীতকালে কোন গাছ কেটো না, বসন্ত আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর। অর্থাৎ , নিজের খারাপ সময়ে কোন খারাপ সিদ্ধান্ত নিও না, বা খারাপ মেজাজ নিয়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিও না। ধৈর্য ধরে বসন্তের জন্য অপেক্ষা কর। জীবনে সবচেয়ে কঠিন সময়েও প্রত্যাবর্তনের  একটা সুপ্ত বীজ লুকিয়ে থাকে। যখন সময় ও অবস্থার পরিবর্তন হয় , তখন, প্রত্যাবর্তনের সুযোগও অযাচিতভাবে এসে উপস্থিত হয়।। 

আরও পড়ুন … … … ***** জীবন বদলানোর 1 টি অসাধারণ গল্প *****

 

Leave a Comment

Solverwp- WordPress Theme and Plugin