গল্প থেকে জীবনে সফল হবার মন্ত্র : আমরা প্রত্যেকে জীবনে সফল হতে চাই । জীবনে সফলতা নির্ভর করে আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট আর বেশ কিছু অভ্যাসের উপর। আমাদের কিছু সু-অভ্যাস আমাদের উন্নতির শিখরে পৌঁছে দেয়, আর কিছু বাজে অভ্যাস আমাদের উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় । এরকমই এক বাজে অভ্যাস হল “দীর্ঘসূত্রিতা ” (PROCASTINATION), যা আমাদের উন্নতির পথে বাধার সৃষ্টি করে। যে কাজটি এখনই শেষ করে ফেলা যায় , সেটি আমরা কালকের জন্য ফেলে রাখি। আবার যখন কাল চলে আসে , আমরা তখন সেটা পরের দিনের জন্য ফেলে রাখি। এটাই হল “দীর্ঘসূত্রিতা” । কখনই এটাকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিৎ নয়। কারন , যে কাজটি আজকে আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়, শুধুমাত্র “দীর্ঘসূত্রিতার” কারনে এমন একটি দিন আসবে, যেদিন, সেই ফেলে রাখা কাজটিই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। আসুন, নীচের গল্প থেকে জীবনে সফল হবার একটা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্র ” দীর্ঘসূত্রিতা এড়ানো উচিত” জেনে নেওয়া যাক ……………………
এক রাজার গল্প থেকে জীবনে সফল হবার মন্ত্রঃ
এক মহা পরাক্রমশালী রাজা সমগ্র ভূখণ্ড জয় করার পর মহা সুখে রাজ্য শাসন করছিলেন । একদিন রাজসভায় তিনি তাঁর সেনাপতিকে বললেন, ” সমগ্র পৃথিবী আমার পদানত, সেনাপতি তুমি আমাকে বল, এমন কোন স্থান আছে কি, যেখানে আমার রাজ্য স্থাপন করা হয়নি?”
সেনাপতি বললেন,” মহারাজ, ভারত মহাসাগরে এক ছোট্ট দ্বিপ আছে যেখানে লোকসংখ্যা খুবই কম, সেটি এখনও আমাদের রাজ্যের সীমানার বাইরে আছে।”
রাজা বললেন,” তবে চল , সেটাও আমাদের অধিকারে আনা যাক ।… … … রাজ জ্যোতিষী , আপনি বলুন , আমরা কোন দিন যাত্রা শুরু করতে পারি?”
জ্যোতিষী গণনা করে বললেন, ” মহারাজ, যে কোন দিন যাত্রা করা যেতে পারে। তবে, ঐ দ্বিপে পা ফেলার পর যে ব্যক্তি প্রথমে আপনার সামনে আসবে তাকে সঙ্গে সঙ্গে হত্যা করতে হবে, তবেই ঐ দ্বিপ আপনার অধীন হবে।” রাজা বললেন, এ আর এমন কি! চল তাই হবে।
নির্দিষ্ট দিনে রাজা গুটিকয়েক সৈন্য নিয়ে ঐ দ্বিপের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। দ্বিপে পৌঁছে তিনি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে গেলেন। তিনি যখন চারিদিকের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে ব্যস্ত, তখন, একজন মাত্র ২ ফুট লম্বা মানুষ (বামন) ঢাল তরোয়াল নিয়ে তাঁর সামনে এসে বলল, ” রাজা যুদ্ধ কর। আমাকে হারাও। এ দ্বিপ তোমার করে নাও।”
রাজা তাঁর সামনে এক বামনকে দেখে মনে মনে বললেন, এর সঙ্গে কি যুদ্ধ করব! তিনি বললেন ,” তুই যা, আমি তোর সঙ্গে যুদ্ধ করব না। আমি এখন দ্বিপটা ঘুরে দেখতে চাই ।” এটা বলার সাথে সাথে বামন চলে গেল। রাজা সারাদিন দ্বিপে ঘুরে ঘুরে কাটালেন।
পরদিন সকালে রাজার সামনে এক চার ফুট লম্বা লোক এসে বলল , ” রাজা আমার সঙ্গে যুদ্ধ কর। আমাকে হারাও। এ দ্বিপ তোমার করে নাও।” রাজা লোকটাকে গুরুত্ব না দিয়ে বললেন, ” যা , যা , আমি তোর সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না।” লোকটি একটু অপেক্ষা করে চলে গেল। রাজা একটা জিনিস লক্ষ করলেন না যে, এই চার ফুট উচ্চতার লোকটা ছিল কালকের সেই লোক , যার উচ্চতা ছিল ২ ফুট ।
তৃতীয় দিন সকালে রাজা যখন তাঁর সৈন্যদের আদেশ দিলেন যে , আজ থেকে এই দ্বিপ আমার, তোমরা নাগারা বাজিয়ে এখানকার লোকদের জানিয়ে দাও, ঠিক তখনই রাজার সামনে এক ৮ ফুট লম্বা লোক এসে বলল, ” রাজা, প্রথমে আমার সঙ্গে যুদ্ধ কর। আমাকে হারাও। তারপর তো এই দ্বিপ তোমার হবে!” রাজা দেখলেন ঢাল তরোয়াল নিয়ে এক ৮ ফুট উচ্চতার লোক তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রাজার এবার বুঝতে অসুবিধা হল না , যে , এ হল সেই বামন, যে প্রথম দিন রাজার কাছে যুদ্ধের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল!
রাজা সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করলেন। কিন্তু সেই ৮ ফুট লম্বা, অসম সাহসী ও অসম্ভব বলশালী লোকটিকে যুদ্ধে হারাতে না পেরে , কোন মতে প্রাণ নিয়ে নিজের রাজ্যে ফিরে আসতে বাধ্য হলেন। তাঁর আর সমগ্র পৃথিবী জয় করা হল না।।
বিশ্লেষণঃ (গল্প থেকে জীবনে সফল হবার মন্ত্র)
রাজা যদি প্রথম দিনেই ২ ফুট উচ্চতার বামনকে খতম করতেন, তবে অনায়াসেই দ্বিপটি জয় করতে পারতেন। কিন্তু তিনি বামনকে গুরুত্ব দেননি । দ্বিতীয় দিন , যেদিন বামন দ্বিগুন লম্বা ও শক্তিধর হয়েছিল, সেদিনও রাজা গুরুত্ব দেননি । কিন্তু তৃতীয় দিন, যেদিন বামন চারগুণ লম্বা ও শক্তিশালী হল, সেদিন রাজার কিছুই করার ছিল না। তিনি পরাস্ত হলেন।
শিক্ষাঃ (গল্প থেকে জীবনে সফল হবার মন্ত্র)
“দীর্ঘসূত্রিতা” মানুষের উন্নতির পথে এক চরম বাধা। “দীর্ঘসূত্রিতা অজুহাতের জন্ম দেয়।” কোন অজুহাত খাড়া করে , আজ নয় কাল, কাল নয় পরশু , এইভাবে কখনই কাজ ফেলে রাখা উচিত নয়। যেটা করনীয় , তা আজই করা উচিত। DO IT NOW এই ধর্ম মেনে চলা উচিত।।
আরও পড়ুন… … … সফলতার সূত্রঃ 1 গল্প থেকে অনুপ্রেরণাঃ