নিজের কাজকে ভালবাসুনঃ আমাদের প্রত্যেকের নিজের কাজের প্রতি যত্নবান হওয়া উচিৎ । জীবন নির্বাহ করার জন্য আমাদের প্রত্যেককেই কোন না কোন কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হয়। আমরা কেউবা ডাক্তার, কেউবা শিক্ষক, কেউ ব্যবসায়ী , কেউ salesman বা কেউ দিনমজুর, বা কেউ কৃষক , শ্রমিক । আমরা যে পেশায় যুক্ত থাকিনা কেন, সেই পেশাটাকে আমাদের প্রাণ দিয়ে ভালবাসা উচিৎ । আমরা যদি আমাদের কাজকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসি এবং সারাদিন কাজের মধ্যে ডুবে থাকি , তাহলে তৃতীয় এক শক্তি আমাদের বিপদ , আপদ, রোগ ইত্যাদি থেকে আমাদের সর্বদায় রক্ষা করে। আসুন নীচের গল্প “নিজের কাজকে ভালবাসুন” থেকে শিক্ষা নেওয়া যাক …… ….. ……
(নিজের কাজকে ভালবাসুন) এক ডাক্তারের গল্প যিনি নিজের কাজকে ভালবাসেনঃ
আমেরিকার এক নামকরা ডাক্তারবাবু মিঃ রবিন। তিনি এক নামী হাসপাতালের অন্যতম চিকিৎসক । হাসপাতালে নিষ্ঠার সঙ্গে ৮ ঘণ্টা কাজ করার পরও তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা করতেন। তিনি এতোই তাঁর পেশাকে ভালবাসতেন যে, স্বপনে, শায়নে, জাগরণে ডাক্তারি ছাড়া আর কিছু ভাবতেই পারতেন না।
একদিন হাসপাতালে সারাদিন কাজ করার পর বাড়ি ফিরে রবিনবাবু ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরলেন। তাঁর স্ত্রী খাবার জন্য বহুবার ডাকাডাকি করলেন, কিন্তু রবিনবাবুর ঘুম ভাঙল না। রাত ঠিক একটা নাগাদ তাঁর বাড়ির ফোনে একটা ফোন এলো । “ডাক্তারবাবু বাড়ি আছেন? আমার স্বামী ভীষণ অসুস্থ। উনি ছাড়া আর কোন ডাক্তারবাবু এতো রাতে রোগী দেখতে আসবেন না। দয়া করে ডাক্তারবাবুকে আমার বাড়ি আসতে বলবেন?” রবিনবাবুর স্ত্রী কোন উত্তর দেওয়ার আগেই রবিনবাবু ওনার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিলেন। অপর প্রান্ত থেকে ঠিকানা জেনে নিয়ে ব্যাগ হাতে বেড়িয়ে পরলেন।
তখন মধ্যরাত্রি। নির্জন রাস্তায় রবিনবাবু এগিয়ে চলেছেন। সম্পূর্ণ একা। কেউ কোথাও নেই। কিন্তু তাঁর কোন দিকেই ভ্রূক্ষেপ নেই। তাঁর মাথায় তখন একটাই চিন্তা , রোগীর শরীর কেমন আছে, তিনি ঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারবেন তো ! এমন সময় তিনি পিছন থেকে একটা আওয়াজ শুনতে পেলেন, “দাদা দেশলাই পাওয়া যাবে? ” রবিনবাবু কোন কথা না বলে পকেট থেকে দেশলাই বেড় করে আগন্তুকের মুখে ধরা সিগারেটে আগুন ধরিয়ে দিলেন। আগন্তুক একটু যেন অবাক হয়েই ধন্যবাদ জানিয়ে চলে গেল। রবিনবাবু তাঁর পথে এগিয়ে চললেন ।
রোগী দেখে তিনি যখন বাড়ির পথে পা বাড়ালেন , তখন রাত প্রায় আড়াইটে বাজে । রাস্তার ঠিক একই জায়গায় তিনি আবার সেইএকই গলার আওয়াজ পেলেন, “দাদা দেশলাই আছে ?” রবিনবাবু এবারও কোন কথা না বলে পকেট থেকে দেশলাই বেড় করে আগন্তুকের সিগারেট ধরালেন। এবারও আগন্তুক যেন একটু অবাক হল, কিন্তু ধন্যবাদ জানিয়ে বিদেয় হল। রবিনবাবু তাঁর বাড়ির পথ ধরলেন।
পরদিন হাসপাতালে পৌঁছে রবিনবাবু জানতে পারেন গতকাল রাত তিনটার দিকে তাঁর এক সহকর্মীর কিছু টাকাপয়সা ছেন্তাই হয়েছে, এবং চোরের সঙ্গে হাতাহাতিতে তিনি আহত হয়েছেন । তিনি এও জানতে পারলেন যে পুলিশের তৎপরতাই চোর ধরাও পরেছে।
রবিনবাবুর মনে তখন এক কৌতূহলের জন্ম নেয়। চোরকে দেখার এক অদম্য ইচ্ছাই তিনি হাসপাতাল থেকে সোজা থানায় চলে যান । থানায় গিয়ে চোরকে দেখে তিনি বুঝতে পারেন, তাঁর অনুমানই সত্যি ! এ যে সেই আগন্তুক, যে গতকাল রাতে সিগারেট ধরাবার জন্য দেশলাই চেয়েছিল !
তিনি কৌতূহলী হয়ে চোরের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি আমায় চিনতে পারছ?”
“কেন পারবো না! গতরাতে আপনি আমাকে দুবার দেশলাই দিয়েছেন,” চোর বলল।
রবিনবাবু বললেন , “আমাকে ছেন্তাই করার দুবার তুমি সুযোগ পেয়েছিলে। রাস্তায় আমি একাই ছিলাম । আশেপাশে দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি ছিল না। তবে তুমি আমাকে ছিন্তাই করলে না কেন?”
চোর বলল, ” দাদা এটাই তো আমার কাছে এখনও রহস্য লাগছে! দুবারই আমি যখন দূর থেকে আপনাকে দেখি, দেখি যে আপনি একা আসছেন। কিন্তু আপনি যখনই দেশলাই জ্বালান, দেখি আপনার ঠিক পিছনে আপনার সাথে আর একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। তাই আমি ছেন্তাই করার সাহস পাইনি।” চোরের এই কথা শুনে রবিনবাবু অবাক হয়ে যান । তিনি আর কোন কথা না বলে সোজা বাড়ির পথে পা বাড়ান , আর ভাবতে থাকেন ” কাল রাতে আমার সঙ্গে কে ছিল?!”
আরও পড়ুন … … … 10 টি best শিক্ষামূলক গল্প
শিক্ষাঃ আপনি যদি আপনার কাজকে ভালবাসেন, নিষ্ঠার সঙ্গে আপনার কাজ করেন, তাহলে আপনার চলার পথে কোন বাধা এলে , তৃতীয় কোন শক্তি আপনার অজ্ঞাতেই, আপনার সঙ্গে থেকে , আপনাকে সে বাধা অতিক্রম করতে সাহায্য করবে। তাই নিজের কাজকে ভালবাসুন।