বাচ্চাদের 10 টি জ্ঞানদায়ক গল্পঃ ছোটরা আমাদের ভবিষ্যৎ । তাই তাদের চরিত্র গঠনের দিকে আমাদের সর্বদা নজর দেওয়া দরকার। এখানে বাচ্চাদের জন্য 10 টি জ্ঞানদায়ক গল্প দেওয়া হল। আশা করি এই গল্পগুলো পড়ে তারা খুবই উপকৃত হবে।

বাচ্চাদের 10 টি জ্ঞানদায়ক গল্পঃ (১) সর্বদা ভালো কাজ করে যাওঃ
একবার ভগবান কৃষ্ণ ও অর্জুন শহর পরিক্রমায় বের হলেন। কিছু সময় পর তাঁরা এক গরীব ব্রাম্ভনকে ভিক্ষা করতে দেখলেন। অর্জুনের মনে খুব দয়া হল। তিনি ব্রাম্ভনকে এক থলি স্বর্ণমুদ্রা দিলেন। এটা পেয়ে ব্রাম্ভন খুব উৎফুল্ল হল। সে অর্জুনকে ধন্যবাদ দিয়ে বাড়ির পথে পা বাড়াল ।
পথমধ্যে ব্রাম্ভন এক ব্যক্তিকে দেখতে পেল যে তার মতই গরীব ছিল। ব্রাম্ভন চাইলেই থলি থেকে দু -একটা মুদ্রা তাকে দিতে পারত, কিন্তু সে তা না করে এগিয়ে চলল ।
হঠাৎ এক চোর কোথা থেকে এসে ব্রাম্ভনের হাত থেকে স্বর্ণমুদ্রার থলিটা ছিনিয়ে নিয়ে ছুটে পালাল । ব্রাম্ভন এতে খুব দুঃখ পেল এবং আবার ভিক্ষা করতে লাগল।
পরের দিন অর্জুন ও কৃষ্ণ ব্রাম্ভনকে আবার ভিক্ষা করতে দেখলেন। অর্জুন খুব অবাক হয়ে গেলেন। যখন অর্জুন ব্রাম্ভনকে এখনও ভিক্ষা করার কারন জানতে চাইলেন , তখন সে সমস্ত ঘটনা বলল। অর্জুনের মনে আবার দয়া হল। তিনি একটা হীরে ব্রাম্ভনকে দান করলেন।
ব্রাম্ভন খুশি হয়ে বাড়ি ফিরে চলল । পথে সে আবার এক হতদরিদ্র লোককে দেখল । কিন্তু সে তাকেও এড়িয়ে চলে গেল। বাড়ি পৌঁছে সে দেখল তার স্ত্রী বাড়ীতে নেই। সে হীরেটা একটা পাত্রের মধ্যে রেখে ঘুমিয়ে পড়ল ।
কিছু সময় পরে তার স্ত্রী ঐ পাত্রটিকে নিয়ে নদীতে জল আনতে গেল। সে হীরাটিকে লক্ষ না করেই পাত্রটি জলে ভর্তি করল, কিন্তু তার অজান্তে হীরাটি জলে পরে গেল।

ঘুম থেকে উঠে ব্রাম্ভন তার স্ত্রীকে হীরাটি দেখাতে গেল, কিন্তু পাত্রে জল ছাড়া আর কিছুই পেল না।
ব্রাম্ভন হতাশ হল। সে তার ভাগ্যকে দোষারোপ করতে লাগল । পরদিন সে আবার ভিক্ষা করতে শুরু করল এবং অর্জুন ও কৃষ্ণ আবার তাকে দেখতে পেলেন। অর্জুন অবাক হয়ে ব্রাম্ভনের দুর্ভাগ্যের কথা শুনলেন।
ভগবান কৃষ্ণ সবকিছুই দেখছিলেন। এবার তিনি ব্রাম্ভনকে একটা মাত্র সাধারন মুদ্রা দিলেন, যেটা দিয়ে কেবলমাত্র একদিনের খাবার কেনা যায় । কৌতূহলী অর্জুন কৃষ্ণকে বললেন, ” ভগবান, আমি ব্রাম্ভনকে এক থলি স্বর্ণমুদ্রা ও একটা দামী হীরা দিলাম, সেগুলো ব্রাম্ভনের ভাগ্য ফেরাতে পারল না, কিভাবে একটা সাধারন মুদ্রা ব্রাম্ভনকে তার ভাগ্য ফেরাতে সাহায্য করবে ?”
কৃষ্ণ হাসলেন এবং বললেন, “চল অর্জুন , ব্রাম্ভনকে অনুসরন করা যাক ।”
এদিকে একটা মাত্র সাধারন মুদ্রা হাতে নিয়ে ব্রাম্ভন সেই স্থান ত্যাগ করল এই ভেবে যে, ভগবান তাকে এত কম ভিক্ষা দিলেন কেন!
রাস্তায় যেতে যেতে ব্রাম্ভন হঠাৎ দেখল এক জেলে মাছ ধরছে এবং একটা মাছ তার জালে আটকা পরে ছটফট করছে। ব্রাম্ভনের মনে খুব দয়া হল। সে কৃষ্ণের দেওয়া মুদ্রাটি জেলেকে দিয়ে মাছটা কিনে নিল। মাছটা হাতে নেওয়ার সাথে সাথেই তার মুখ থেকে একটা হীরে বেড়িয়ে এল। ব্রাম্ভন আনন্দে চিৎকার করে উঠল “পেয়েছি! পেয়েছি!”
ঠিক সেই সময় সেই পথ দিয়ে সেই চোর যাচ্ছিল , যে ব্রাম্ভনের স্বর্ণমুদ্রার থলি ছিনিয়ে নিয়েছিল। “পেয়েছি পেয়েছি” শুনে সে ভাবল ব্রাম্ভন তাকে চিনতে পেরেছে। তাই সে ব্রাম্ভনের কাছে এসে সেই থলি ফিরত দিল এবং ক্ষমা চাইল । ব্রাম্ভনের এসব বিশ্বাসই হচ্ছিল না।
ভগবান কৃষ্ণ ও অর্জুন সব কিছু লক্ষ করছিলেন । অর্জুন বললেন, ” হে ভগবান, আমি আপনার লিলা বুঝতে পেরেছি , এ সব কিছুই বাচ্চাদের 10 টি জ্ঞানদায়ক গল্পভাল কাজের ফল।” ………….. কৃষ্ণ হাসলেন ।
শিক্ষাঃ (বাচ্চাদের 10 টি জ্ঞানদায়ক গল্প): ভাল কাজ না করলে কখনই ভাল ফল পাওয়া যাবে না। সর্বদা ভাল কাজ করে যাও ।।
বাচ্চাদের 10 টি জ্ঞানদায়ক গল্পঃ (২) অপরের বিপদে সাহায্যের হাত বাড়াওঃ
এক ব্যবসায়ীর একটা খামার ছিল। খামারে তার একটা গাধা ও একটা ঘোড়া থাকত । গাধাটি ছিল কুৎসিত , কালো এবং ছোট্ট, যেখানে ঘোড়াটি ছিল বড় এবং তেজি। তারা খামারে একসঙ্গে থাকত।
ব্যবসায়ী প্রতিদিন গাধার পিঠে ভারী মালপত্র চাপিয়ে শহরে বিক্রির জন্য যেত, এবং সঙ্গে ঘোড়াটিও থাকত ।
একদিন শহরে যাবার পথে গাধাটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। সে প্রায় অজ্ঞান হয়ে পড়ার উপক্রম হয়। গাধাটি ঘোড়াটিকে অনুরোধ করে , ” তুমি কি তোমার পিঠে আমার কিছু মালপত্র নিতে পারবে? আমার শরীর ভাল লাগছে না, মনে হয় এখুনি মারা যাব ।”

ঘোড়া গাধার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে বলল, “ও প্রিয় গাধা! তুমি কি জানো না আমার কি কাজ? আমি হলাম রেসে দৌড়াবার ঘোড়া, মালপত্র বহন করার কাজ আমার নয়। তুমি ভালমতোই জানো যে, তোমাদের জন্মই হয়েছে মালপত্র বহনের জন্য। সেই কারনেই তোমাদের চওড়া ও শক্ত পিঠ । আমি তোমার কথা রাখতে পারলাম না।” এই বলে সে তার প্রভুর দিকে চলে গেল।
গাধা প্রচণ্ড রোদে আর মাল বহন করতে পারল না। সে মাটিতে পরে গেল , আর সঙ্গে সঙ্গে মারা গেল।
ব্যবসায়ী খুব দুঃখ পেল। সে গাধার পিঠ থেকে মালপত্র খুলে ঘোড়ার পিঠে চাপাল । ঘোড়া তার মনিবকে কিছু বলতে পারল না। শুধু তাই নয়, তার প্রভু মৃত গাধাটিকেও তার পিঠে চাপিয়ে দিল।
এখন ঘোড়া মনে মনে নিজেকে দোষ দিতে লাগল এই বলে যে, কেন সে গাধার কথা শুনে গাধার ভার শেয়ার করে নিল না ! নিলে এখন তাকে এত কষ্ট ভোগ করতে হত না!
শিক্ষাঃ (বাচ্চাদের 10 টি জ্ঞানদায়ক গল্প): বিপদে বন্ধুকে সাহায্য না করলে একই বিপদে নিজেকে পরতে হয়।।
বাচ্চাদের 10 টি জ্ঞানদায়ক গল্পঃ (৩) সত্য বল, কিন্তু কাউকে দুঃখ দিয়ে নয়ঃ
একদিন দেবতাদের গুরু বৃহস্পতি বিবাহ করতে মনস্থির করলেন। বিবাহ উপলক্ষে তিনি একটি ভোজ সভার আয়োজন করলেন। বনের সমস্ত পশুপাখীকে তিনি ভোজে আমন্ত্রন জানালেন।
সেই ভোজে সবাই উপস্থিত হল, কিন্তু বৃহস্পতির প্রানের বন্ধু কচ্ছপ এলো না।
পরে একদিন বৃহস্পতি কচ্ছপের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। তিনি বললেন , “বন্ধু, আমি কি জানতে পারি, যে তুমি কেন আমার বিয়েতে এলে না? তোমার কি শরীর খারাপ ছিল?”

কচ্ছপ প্রত্যুত্তরে বলল, “না না, শরীর খারাপ থাকবে কেন? আসলে আমি একটু ঘরকুনো টাইপের জন্তু। আমি কোন নিমন্ত্রন বাড়িতে যেতে পছন্দ করি না। আমার মনে হয় ভোজ খেতে যাওয়ার চেয়ে ঘরে সময় কাটানো ভাল।”
যদিও কচ্ছপ সত্য কথায় বলেছে, তথাপি দেবগুরু বৃহস্পতি মনে মনে খুব আঘাত পেলেন। তিনি বললেন, “যেহেতু বাড়িতেই সময় কাটাতে বেশি পছন্দ কর, তাই আমি তোমাকে অভিশাপ দিচ্ছি, আজ থেকে তুমি তোমার পিঠে করে তোমার ঘর বহন করে বেড়াবে । তুমি চাইলেও তা পিঠ থেকে নামাতে পারবে না।”
সেই থেকে কচ্ছপ তার পিঠে করে তার বাড়ি বহন করে বেড়ায় ।
শিক্ষাঃ (বাচ্চাদের 10 টি জ্ঞানদায়ক গল্প): সত্য কথা বলা অবশ্যই দরকার, তবে সেটা কখনই অন্যকে আঘাত করে নয়।।
বাচ্চাদের 10 টি জ্ঞানদায়ক গল্প: (৪) নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থেকো , ভাগ্য তোমার সঙ্গ দেবেঃ
এক গ্রামে এক বৃদ্ধ বাস করত। তার একটা বিরল প্রজাতির ঘোড়া ছিল। সেখানকার রাজা ঘোড়াটি বৃদ্ধের কাছ থেকে কিনে নেবার জন্য খুব ভাল দাম দিতে চাইল । কিন্তু বৃদ্ধ সেটি বিক্রি করতে রাজি হল না।
একদিন সকালে বৃদ্ধ তার আস্তাবলে ঘোড়াটি দেখতে পেল না। গ্রামের সবাই বলাবলি করতে লাগল , “বোকা বৃদ্ধ! যদি রাজাকে তুমি ঘোড়াটি বেচে দিতে , তো ভাল দাম পেতে। এখন ঘোড়াটি বনে পালাল তো ! কি দুর্ভাগ্য তোমার !”
বৃদ্ধ হেসে জবাব দিল, “ঘোড়াটি আমার খুব প্রিয় ছিল, তাই তাকে বেচতে চাইনি । আচ্ছা, যে গেছে, সে গেছে! চিন্তা করে কি করব?” — লোকে তার দিকে চেয়ে হাসতে লাগল ।

কিছুদিন পর ঘোড়াটি বন থেকে ফিরে এল। সঙ্গে নিয়ে এল একই প্রজাতির চারটি বাচ্চা ঘোড়া।
লোকে আবার জড়ো হল এবং বলল, “বৃদ্ধ তুমিই ঠিক ছিলে, আমরা ভুল ছিলাম। ওটা কোন দুর্ভাগ্য ছিল না, ওটা ছিল তোমার সৌভাগ্য। এখন তোমার কাছে মোট পাঁচটা বিরল প্রজাতির ঘোড়া আছে। তুমি ওদের ভাল করে প্রশিক্ষন দিলে অনেক বেশি টাকা রোজগার করতে পারবে। এবার একটা দক্ষ প্রশিক্ষককে কাজে লাগাও।”
বৃদ্ধ তার একমাত্র পুত্রকে নতুন ঘোড়াদের প্রশিক্ষন দেবার কাজে লাগাল। কয়েকদিন পর প্রশিক্ষন দেবার সময় ঘোড়ার উপর থেকে তার পুত্র পড়ে গিয়ে পা ভেঙ্গে ফেলল।
লোকে আবার জড়ো হল এবং বলল, “বৃদ্ধ আমাদের কথা শুনলে না তো! এখন এই বৃদ্ধ বয়সে খোঁড়া ছেলেকে নিয়ে কিভাবে দিন কাটাবে?”
বৃদ্ধ বলল, “এখন আর কি করার আছে? আমার যেটা ভাল মনে হয়েছিল আমি তাই করেছি।”
এর ঠিক একমাস পর রাজ্যে যুদ্ধ দেখা দিল। ঐ গ্রামের সমস্ত যুবক ছেলেদের যুদ্ধে জেতে বাধ্য করা হল। কিন্তু বৃদ্ধের ছেলেকে নিয়ে গেল না, কারন সে খোঁড়া ছিল। বৃদ্ধ মনে মনে বলল, “হে ভগবান! কি সৌভাগ্য আমার!”
শিক্ষাঃ (বাচ্চাদের 10 টি জ্ঞানদায়ক গল্প): দুর্ভাগ্য ও সৌভাগ্য বলে কিছু হয় না। আমরা যদি নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকি, তবে দুর্ভাগ্যও সৌভাগ্যে পরিনত হয়।।
বাচ্চাদের 10 টি জ্ঞানদায়ক গল্পঃ (৫) কোন কিছু বলার আগে চিন্তা ভাবনা করে বলঃ
এক বৃদ্ধ ও এক যুবক পাশাপাশি বাস করত। বৃদ্ধ লোকটি সবসময় অপরের সমালোচনা করে বেড়াত। শুধু তাই নয়, অপরকে ছোট করে সে খুব আনন্দ পেত।
একদিন বৃদ্ধ, যুবকটি সম্পর্কে পাড়ায় রটিয়ে দিল যে যুবকটি একটি চোর এবং সে তার একটি মুল্যবান জিনিস চুরি করেছে। এটা শুনে পাড়ার সকলে থানায় খবর দিল এবং পুলিশ এসে তাকে ধরে নিয়ে গেল। পরদিন তাকে কোর্টে তোলা হল।
এতটা যে বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে তা বৃদ্ধ ভাবতে পারেনি। সে মনে মনে খুব দুঃখ পেল এবং বিচারককে বলল, “হুজুর, যুবক সম্পর্কে আমি যা কিছু বলেছি, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এগুলো রটনা ছাড়া আর অন্য কিছু নয়। আমি দুঃখিত । আমাকে ক্ষমা করে দিন।”

রাগে লাল হয়ে বিচারক বৃদ্ধকে আদেশ দিলেন, “সারা জীবনে আপনি যে সমস্ত রটনা রটিয়েছেন , সেগুলি একটা একটা করে কাগজে লিখে সারা গ্রামে ছড়িয়ে আসুন।” এই বলে তিনি বৃদ্ধকে পরের দিন কোর্টে হাজির হবার নির্দেশ দিলেন।
পরের দিন বিচারক বৃদ্ধকে বললেন, “কালকের আদেশ পালন করেছেন?”
বৃদ্ধ জবাব দিলেন “হ্যাঁ।”
বিচারক বললেন, “তাহলে যান, এখুনি গিয়ে যে কাগজগুলো কাল ছড়িয়েছিলেন , সেগুলো কুড়িয়ে আনুন।”
অবাক হয়ে বৃদ্ধ বলল, “হুজুর, ক্ষমা করবেন। কালকের ছড়ানো কাগজ আজ আর খুঁজে পাব কিভাবে? সেগুলো নিশ্ছয়ই উড়ে অন্য কোথাও চলে গেছে।”
বিচারক মৃদু হেসে বললেন, ‘একইভাবে, আপনি যদি কারও নামে একবার কোন খারাপ কথা রটিয়ে তার সন্মানহানী করেন, তবে সেই সন্মান কি সেই ব্যক্তি আর কোনদিন ফিরত পাবে?”
বৃদ্ধ তার কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করতে লাগল।
শিক্ষাঃ (বাচ্চাদের 10 টি জ্ঞানদায়ক গল্প): ভেবেচিন্তে কথা বলা উচিত ।।
বাচ্চাদের 10 টি জ্ঞানদায়ক গল্পঃ (৬) কাউকে আগে থেকে বিচার কোরো নাঃ
এক ডাক্তার ছুটতে ছুটতে হাসপাতালে ঢুকলেন, তাঁর একটি সার্জারি করার আছে। তাঁকে দেখেই রোগীর বাবা চিৎকার করতে শুরু করল, “আপনার এই আসার সময় হল? আমার ছেলে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে! আপনার এই দায়িত্বজ্ঞান!”
ডাক্তারবাবু শান্তভাবে বললেন, “আমি খুবই দুঃখিত, আমার একটু দেরি হয়ে গেছে। আপনি একটু শান্ত হন।”
“দুঃখিত! একটু দেরি হয়ে গেছে! আপনার কি কোন মানবিকতা নেই? আপনার ছেলে হলে আপনি শান্ত থাকতে পারতেন?” রোগীর বাবা চিৎকার করে বলতে থাকল।

ডাক্তারবাবু কোন উত্তর না দিয়ে তার কাঁধে হাত রেখে, মৃদু হেসে অপারেশন রুমে প্রবেশ করলেন।
এক ঘণ্টা পর অপারেশন রুম থেকে বেড়িয়ে তিনি রোগীর বাবাকে বললেন, “অপারেশন সফল হয়েছে, দুশ্চিন্তার কিছু নেই। যদি কোন কিছুর জানার থাকে, তো , নার্স আপনাকে বুঝিয়ে দেবে।” এই বলে কোন উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে ডাক্তারবাবু দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে গেলেন।
লোকটি ডাক্তারবাবুর ব্যবহারে অবাক হয়ে নার্সকে জানালো যে, সে ডাক্তারবাবুর ব্যবহারে আদৌ খুশি নয়। এই হাসপাতালে তাদের আসা ভুল হয়েছে।
এরপর আসল সত্য জানা গেল। চোখে জল নিয়ে নার্স বলল, “গতকাল রাতে ডাক্তারবাবুর একমাত্র পুত্র একটি দুর্ঘটনায় মারা যায়। তিনি তাঁর পুত্রের দাহকার্যে ছিলেন। আপনার ছেলের অপারেশনটি এতই দরকারি ছিল যে, তিনি আসতে বাধ্য হন। অপারেশন শেষে তিনি আবার দাহকার্যে ফিরে গেলেন।”
শিক্ষাঃ ( বাচ্চাদের 10 টি জ্ঞানদায়ক গল্প): বাইরে থেকে কাউকে দেখে বোঝা যায় না , যে, সে কি পরিস্তিতিতে আছে। সুতরাং হঠাৎ করে তার ব্যবহার সম্পর্কে কোনরকম মন্তব্য করা ঠিক নয়, বা তার সম্পর্কে কোন কিছু বিচার করা উচিত নয়।।
বাচ্চাদের 10 টি জ্ঞানদায়ক গল্পঃ (৭) বড়দের সম্মান দাওঃ
একটা এরোপ্লেনে একজন ধনী যুবতি মহিলা দেখল যে, ঠিক তার পাশের আসনে এক বয়স্ক দরিদ্র লোক বসে আছে। অপ্রস্তুত হয়ে সে বিমান সেবিকাকে ডাকল , আর এই sitting arrangement এ সে যে মোটেই খুশি নয় তা জানাল। সে একজন বৃদ্ধ দরিদ্র লোকের সঙ্গে ভ্রমন করতে রাজি নয়। Economy class ছিল পুরোপুরি ভর্তি , কিন্তু মহিলা তার আসন পরিবর্তন করার জেদ ধরে থাকল।
বিমান সেবিকা কোন উপায় না দেখে বিমানের ক্যাপ্টেনের সঙ্গে আলোচনা করল এবং একটা সমাধান বের করল।

মহিলার ইচ্ছা অনুযায়ী সেবিকা ঘোষণা করল যে, প্রথম শ্রেনীতে একটা মাত্র আসন ফাঁকা আছে। মহিলা সঙ্গে সঙ্গে ঠোঁটের কোনে হাসি নিয়ে প্রথম শ্রেনীতে যাবার উপক্রম হল। কিন্তু সবাইকে অবাক করে বিমান সেবিকা বৃদ্ধ লোকটির কাছে এসে বলল, “ক্ষমা করবেন স্যার, এইরূপ এক অভদ্র মহিলার পাশে আপনাকে বসতে দেবার জন্য! আসুন, আমরা প্রথম শ্রেনীতে আপনার বসার ব্যবস্থা করেছি।”
যখন সেবিকা বৃদ্ধ লোকটিকে নিয়ে প্রথম শ্রেনীতে যেতে থাকল, তখন বিমানের সমস্ত যাত্রী হাততালি দিতে থাকল, আর মহিলা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল।
শিক্ষাঃ ( বাচ্চাদের 10 টি জ্ঞানদায়ক গল্প): কখনই কাউকে তার সামাজিক ও আর্থিক পরিস্তিতি দেখে অসম্মান কোর না। বয়স্করা সর্বদায় সম্মানের যোগ্য ।।
বাচ্চাদের 10 টি জ্ঞানদায়ক গল্পঃ (৮) তুমি যা চাইবে, তাই পাবে—– তবে, সর্বদা ভালোটা চেওঃ
উত্তর আমেরিকার মরুভূমিতে দুই ধরনের পাখী দেখা যায় , যারা একই উচ্চতায় এবং একই আবহাওয়ায় উড়তে থাকে। কিন্তু উভয়ের দৃষ্টিভঙ্গি এবং কার্যকারণ সম্পূর্ণ ভিন্ন। একটি পাখী হল শকুন, এবং অপরটি হামিং বার্ড ।
শকুন, যে কিনা পচা, গলা মাংস খেয়ে বড় হয়, সর্বদা মৃতদেহ দ্বারা আকৃষ্ট হয়। মরুভূমির কোন অংশে গেলে মৃতদেহ বা মুমূর্ষু প্রানী দেখতে পাওয়া যাবে, এরা তারই খোঁজ করতে থাকে।

অপরদিকে, মরুভূমির রুক্ষতা, শুষ্কতা , পচা মাংস, মরা জীবজন্তু ইত্যাদী হামিং বার্ডকে আকর্ষণ করে না। এই ছোট্ট পাখী, মরুভূমির ক্যাকটাসের ছোট ছোট ফুলের খোঁজ করে। তাতে বসে, তার মধু সংগ্রহ করে। তারা মরুভূমিতে মরুদ্যানের খোঁজ করে , তার মিষ্টি জল খায়।
দুটি পাখী , একই পরিবেশে থেকে , যা চায় , তাই পায়। শকুন চায় ক্ষয় ও মৃত্যু, আর হামিং বার্ড চায় জীবন ও পুষ্টি । তাদের দৃষ্টিভঙ্গিই তাদের চাওয়া পাওয়া ঠিক করে দিয়েছে।
শিক্ষাঃ (বাচ্চাদের 10 টি জ্ঞানদায়ক গল্প): এই পৃথিবীতে ভাল, খারাপ সহাবস্থান করছে। তুমি তখনি ভাল জিনিস পাবে, যদি তোমার দৃষ্টিভঙ্গি ভালো হয়।।
বাচ্চাদের 10 টি জ্ঞানদায়ক গল্পঃ (৯) সুযোগ পেলে কাজে লাগাও, দেরি কোরো নাঃ
এক কাঠুরে তার স্ত্রীকে নিয়ে জঙ্গলে বাস করত। সে প্রতিদিন নিয়ম করে জঙ্গলে যেত, কাঠ কাটত, এবং সেই কাঠ বাজারে বিক্রী করে বাড়ি ফিরত। এইভাবে তাদের জীবন কাটত ।
একদিন কাঠুরে জঙ্গলে একটা বড় গাছ দেখতে পেল। কাঠুরে ভাবল , এই একটা গাছ কাটলেই সে অনেক কাঠ পাবে, এবং সেগুলো বিক্রী করে অনেক টাকা পাবে। এই ভেবে সে তার কুঠার দিয়ে গাছের একটা ঝুড়ি কাটতে উদ্যত হল। ঠিক সেই সময় সে একটা নারী কণ্ঠ শুনতে পেল, “দয়া করে গাছটি কাটবে না।” কাঠুরে তার কুঠার নামিয়ে চারদিক দেখল, কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না। সে আবার কুঠার তুলল এবং আবার একই কথা শুনতে পেল। সে আবার চারদিকে তাকাল।
তখনই একটা পরী গাছ থেকে নেমে এল, এবং বলল, “আমি এক পরী, আমি এই গাছে থাকি। পৃথিবীর এই একটি মাত্র গাছই আমাকে নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছে। শীতে আমি গাছের কোটরে খুব আরামে থাকি, আবার গরমে গাছের শাখার ঠাণ্ডা বাতাস আমাকে আরাম দেয়। তোমাকে আমি তিনটে ইচ্ছাপূরণের সুযোগ দেব, তুমি গাছটি কেটো না।”
কাঠুরে খুব খুশি হল এবং বলল, “আমি বাড়ি ফিরে আমার স্ত্রীর সাথে আলোচনা করে তিনটে ইচ্ছা চেয়ে নেব।” পরী বলল, “ঠিক আছে, তাই হবে।”

কাঠুরে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে তার স্ত্রীকে সব কথা বলল। প্রথমে বিশ্বাস না করলেও কাঠুরের স্ত্রী তার স্বামীর আনন্দ দেখে বিশ্বাস করতে লাগল । কাঠুরে বলল, “চল , খুব ক্ষিদে পেয়েছে, আগে কিছু রান্না কর।”
স্ত্রী বলল, “একটু অপেক্ষা কর।”
স্ত্রীর দেরি দেখে কাঠুরে বলল, “থাক, আর রান্না করতে হবে না, অনেক সময় লাগবে। আমার কাছে তিনটে ইচ্ছাপূরণের শক্তি আছে। আমার প্রথম ইচ্ছা হল, এখুনি আমার কাছে কিছু মিষ্টি এবং গরম গরম পিঠে আসুক।”
যেই না এই কথা বলা, সঙ্গে সঙ্গে তার কাছে ভাল ভাল মিষ্টি এবং গরম গরম পিঠে এসে হাজির হল। কাঠুরে আনন্দে খাওয়া শুরু করল।
কাঠুরের স্ত্রী এটা দেখে রাগে লাল হয়ে উঠল । সে চিৎকার করে বলল, “হতভাগা! তুমি একটা বর নষ্ট করে ফেললে! আমি এখন চাই ওই গরম পিঠে তোমার নাকে মুখে ঢুকে তোমাকে ব্যাথা দিক, লোভী কাঠুরে !”
সঙ্গে সঙ্গে গরম পিঠে কাঠুরের নাকে মুখে ঢুকে যেতে থাকল। তার স্ত্রী হাসতে লাগল। কাঠুরে বিরক্ত হল। সে কোনভাবেই নাক মুখ থেকে পিঠে ছাড়াতে পারল না। সে তার স্ত্রীকে দোষারোপ করতে থাকল এই বলে যে, সে দ্বিতীয় বরটাও নষ্ট করে ফেলল। যখন সে কোনভাবেই পিঠেগুলো পরিস্কার করতে পারল না, তখন সে বিরক্ত সহকারে বলল, “আমি চাই এখনই পিঠেগুলো ভ্যানিশ হয়ে যাক।”
যদিও সঙ্গে সঙ্গে পিঠেগুলো ভ্যানিশ হয়ে গেল, তার সাথে তিনটে বরও নষ্ট হয়ে গেল। কাঠুরে তার কৃতকর্মের জন্য দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
এইভাবে স্বামী স্ত্রী, তাদের নির্বুদ্ধিতার জন্য, তাদের ভাগ্য বদলানোর সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করল।
শিক্ষাঃ (বাচ্চাদের 10 টি জ্ঞানদায়ক গল্প): যখন কোন সুযোগ দরজায় করাঘাত করে, তখনই সেই সুযোগ কাজে লাগাতে হয়।।
বাচ্চাদের 10 টি জ্ঞানদায়ক গল্পঃ (১০) উপস্থিত বুদ্ধি ও নিজের প্রতি আস্থা রেখো , সাফল্য আসবেইঃ
এক রাজ্যে এক অপরূপা সুন্দরী রাজকন্যা ছিল। তাকে বিবাহ করার জন্য বিভিন্ন রাজ্যের রাজপুত্ররা পরোয়ানা নিয়ে আসতো । রাজকন্যা মনে করত, তার স্বামী হবে সেই, যে কিনা প্রচণ্ড বুদ্ধিমান। তাই সে রাজপুত্রদের বুদ্ধির পরীক্ষা নিত। সে কিছু ধাঁধা ঠিক করে রেখেছিল। যে ঐ ধাঁধার সঠিক উত্তর দিতে পারবে, রাজকন্যা তাকেই বিয়ে করবে। কিন্তু হায়! এখনো পর্যন্ত কোন রাজপুত্রই ধাঁধার সমাধান করতে পারেনি।
একদিন রাজকন্যার পোশাক বানানোর জন্য তিনজন দর্জি অন্দরমহলে উপস্থিত হল। রাজকন্যার রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে তিনজনই তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসল । রাজকন্যা মৃদু হাসল, এবং তার শর্তের কথা বলল। তিনজনেই খুব বুদ্ধিমান ছিল। তারা ধাঁধার উত্তর দিতে রাজি হল।
পরদিন তিন দর্জিকে রাজকন্যার সামনে আনা হল। রাজকন্যা মৃদু হাসল । সে নিশ্চিত ছিল যে, কেউই তার ধাঁধার উত্তর দিতে পারবে না। সে প্রশ্ন করল, “আমার মাথায় দু-রকমের চুল আছে। রঙগুলো কি কি?”
কিছুটা চিন্তা করে প্রথম দর্জি বলল, “এটা সাদা ও কালো ।”
“ভুল,” রাজকন্যা বলল।
দ্বিতীয় দর্জি বলল, “এটা কালো ও বাদামী।”
রাজকন্যা হেসে জবাব দিল, “আপনিও ঠিক বলতে পারলেন না।”
তৃতীয় দর্জি বলল, “আমি দেখছি রাজকন্যার মাথায় সোনালি ও রূপালি চুল আছে। সুতরাং ওই দুটোই হল সঠিক রঙ।”

এই উত্তর শুনে রাজকন্যা ভয় পেয়ে গেল। সে ভাবল এটা তো সঠিক উত্তর। তবে কি তাকে এই সামান্য দর্জিকে বিয়ে করতে হবে? সে বলল, “হ্যাঁ , এটা ঠিক উত্তর। কিন্তু এটাই পরীক্ষার শেষ নয়, তোমাকে সারারাত আমার ভল্লুকের সাথে কাটাতে হবে। যদি সকালে তুমি বেঁচে ফিরে আসতে পার এবং এখনকার মতোই তখন তোমাকে যদি তরতাজা লাগে , তবেই আমি তোমাকে বিয়ে করব।”
তৃতীয় দর্জি হাসতে হাসতে রাজি হয়ে গেল।
সন্ধ্যে হতে দর্জিকে একটা সুবিশাল ভল্লুকের খাঁচার সামনে নিয়ে যাওয়া হল। দরজা খোলার সাথে সাথেই ভল্লুক তার উপর ঝাঁপিয়ে পরে তাকে মাটিতে ফেলে দিল।
দর্জি বলে উঠল , “ভল্লুক ভায়া, অত তাড়া কিসের? একটু এসো , দুটো বাদাম খাওয়া যাক।” এই বলে তার জামার পকেট থেকে কিছু বাদাম বের করে চিবোতে লাগল । ভল্লুক অবাক হয়ে দর্জির দিকে হাত বাড়াল । দর্জি অন্য পকেটে হাত ঢুকিয়ে বাদামের পরিবর্তে কিছু পাথর বের করে ভল্লুককে দিল। ভল্লুক দাঁত দিয়ে পাথর ভাঙতেই পারল না। এদিকে সে দেখল দর্জি অনায়াসে বাদাম ভেঙে খাচ্ছে। অনেক চেষ্টা করেও সে যখন একটাও বাদাম ভাঙতে পারল না, তখন ভল্লুক হার স্বীকার করে খাঁচার এক কোনে গিয়ে শুয়ে থাকল। দর্জিও অন্য পাশে শুয়ে পড়ল এবং ঘুমিয়ে গেল।
পরদিন সকালে রাজকন্যা দেখল খাঁচা থেকে দর্জি বেরিয়ে আসছে, যার মধ্যে ক্লান্তির কোন চিহ্ন নেই। সে বুঝল, এই দর্জিই তার উপযুক্ত সঙ্গী । সে তাকে বিয়ে করতে রাজি হল এবং মহা ধুমধামের সাথে তাদের বিয়ে হল।
শিক্ষাঃ ( বাচ্চাদের 10 টি জ্ঞানদায়ক গল্প): তোমার যদি উপস্থিত বুদ্ধি থাকে, এবং যদি নিজের প্রতি আস্থা থাকে, তবে তুমি জীবনে অনন্ত সাফল্য লাভ করবে।।
আরও পড়ুনঃ … … … ৩ টি বাংলা শিক্ষামূলক গল্পঃ 3 Best Motivational Story:
আরও পড়ুনঃ … … … 2 Motivational Story: শিক্ষামূলক গল্পঃ