সুখী হবার সূত্র 1ঃ যক্ষ ও যুধিষ্ঠিরের প্রশ্নোত্তর থেকে শিক্ষাঃসুখ এক অচিন পাখী । আজ আমাদের অনেকেরই অনেক ধনসম্পদ আছে , পদমর্যাদা আছে, খ্যাতি আছে, কিন্তু সুখ নেই। সুখী হবার কি সত্যই কোন সূত্র আছে? ……… না, কোন সূত্র নেই। আমাদের কিছু জ্ঞান আর কিছু অভ্যাস আমাদের সুখী করে তোলে । মহাভারতের ৩৯ নম্বর পর্বে যক্ষ ও যুধিষ্ঠিরের কথোপকথন পর্বে জীবনে সুখী হবার উপায় সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায় । আসুন, যক্ষ ও যুধিষ্ঠিরের প্রশ্নোত্তর থেকে সুখী হবার সূত্র খোঁজার চেষ্টা করা যাক … … …
সুখী হবার সূত্র 1ঃ যক্ষ ও যুধিষ্ঠিরের প্রশ্নোত্তর থেকে শিক্ষাঃ
একবার ধর্মরাজ তাঁর পুত্র যুধিষ্ঠিরের বুদ্ধির পরীক্ষা নেবার জন্য প্রথমে এক হরিণের রূপ ধারণ করে এক ব্রাম্ভনের আরনি আর মন্থ হরণ করেন। ব্রাম্ভন যুধিষ্ঠিরের কাছে এসে সেগুলি খুঁজে দেবার কথা বলেন। পঞ্চ পান্ডপ সেই হরিণকে খুঁজতে লাগলেন ,কিন্তু কোথাও খুঁজে পেলেন না। তাঁরা তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েন । যুধিষ্ঠিরের আদেশে নকুল তূণে করে জল আনতে যান ।
নকুল জলের কাছে এসে জল পান করতে গেলেন। এমন সময় যক্ষ – বেশী ধর্মরাজ বললেন ,……… বৎস , এই জল আমার অধিকারে আছে, আমার প্রশ্নের উত্তর দাও, তারপর জল পান কর। তৃষ্ণার্ত নকুল সেই কথা অগ্রাহ্য করে জল পান করলেন এবং ভূপতিত হলেন।
নকুল ফিরে আসছেন না দেখে যুধিষ্ঠির সহদেবকে পাঠালেন । তাঁর সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটল । এরপর একে একে অর্জুন ও ভীম যক্ষের কথা না শুনে ভূপতিত হলেন।
অবশেষে যুধিষ্ঠির জলের কাছে এসে বুঝতে পারলেন যে তাঁর শক্তিশালী ভাইদের মারার শক্তি একমাত্র কোন মায়াবী দেবতার পক্ষেই সম্ভব। তিনি জল পান করতে গেলে যক্ষ দেখা দিয়ে বললেন, ………… আমিই তোমার ভাইদের মেরেছি। তারা আমার প্রশ্নের কোন উত্তর দেয় নি। এখন তুমি যদি আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারো , তবেই তুমি জল পান করতে পারবে আর তোমার ভাইদের ফিরে পাবে। এই বলে যক্ষ একটা একটা করে প্রশ্ন করতে থাকলেন , আর যুধিষ্ঠির প্রতিটা প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে থাকলেন। যুধিষ্ঠিরের উত্তরে সন্তুষ্ট হয়ে যক্ষ রূপি ধর্মরাজ ব্রাম্ভনের আরনি ও মন্থ ফিরিয়ে দিলেন, এবং তাঁর ভাইয়েদের জীবন দান করলেন।
প্রশ্নোত্তরঃ
ব্রাম্ভনের, দেবত্ব কি কারনে হয়? বেদাধ্যয়নের ফলে।
কোন ধর্মের জন্য তাঁরা সাধু ? তপস্যার ফলে তাঁরা সাধু।
অসাধুভাব কেন হয়? পরনিন্দার ফলে তাঁরা অসাধু হন।
ক্ষত্রিয়ের , দেবত্ব কি? অস্ত্র নিপুণতাই ক্ষত্রিয়ের দেবত্ব।
সাধু ধর্ম কি? যজ্ঞই সাধু ধর্ম ।
অসাধুভাব কি? শরণাগতকে পরিত্যাগই অসাধুভাব।
পৃথিবী অপেক্ষা গুরুতর কে? মাতা ।
আকাশ অপেক্ষা উচ্চতর কে? পিতা ।
বায়ূ অপেক্ষা শীঘ্রতর কে ? মন।
তৃণ অপেক্ষা বহুতর কে? চিন্তা ।
প্রবাসী , গৃহবাসী , আতুর ও মুমূর্ষু এদের মিত্র কারা? প্রবাসীর মিত্র সঙ্গী ।
গৃহবাসীর মিত্র ভার্যা ( পত্নী ) ।
আতুরের মিত্র চিকিৎসক ।
মুমূর্ষুর মিত্র দান ।
কি ত্যাগ করলে লোকপ্রিয় হওয়া যায় ? অভিমান।
কি ত্যাগ করলে শোক হয় না ? ক্রোধ ।
কি ত্যাগ করলে ধনী হয় ? কামনা ।
কি ত্যাগ করলে সুখী হয় ? লোভ ।
আশ্চর্য কি? প্রাণীগণ প্রত্যহ যমালয়ে যাচ্ছে , তথাপি অবশিষ্ট সকলে চিরজীবী হতে চায় । এটাই আশ্চর্যের ।
পন্থা কি? মহাজন ( বিখ্যাত সাধুজন অথবা গুণীজন ) যে পথে গেছেন, তাই পন্থা।
সুখী কে? যে লোক ঋণী ও প্রবাসী না হয়ে দিবসের অষ্টম ভাগে ( সান্ধ্যকালে) শাক রন্ধন করে, সেই সুখী ।
সর্ব ধনেশ্বর কে? প্রিয়- অপ্রিয় , অতিত – ভবিষ্যৎ যিনি তুল্য জ্ঞান করেন, তিনিই সর্ব ধনেশ্বর ।
আরও পড়ুন … … … নিজেকে জানুনঃ অনুপ্রেরণার গল্প
শিক্ষাঃ সুখী হবার সূত্র1ঃ যক্ষ ও যুধিষ্ঠিরের প্রশ্নোত্তর থেকে শিক্ষাঃ
জীবনে সুখী হতে হলে নিজ নিজ কর্ম করে যেতে হবে। পিতা মাতাকে সন্মান করতে হবে। চিন্তা দূর করতে হবে। নিজের মনকে নিয়ন্ত্রনে আনতে হবে। মনে অসাধুভাব আনা যাবে না। লোভ , ক্রোধ , কামনা , অভিমান ত্যাগ করতে হবে। উপযুক্ত বন্ধু বেছে নিতে হবে। মহাজনরা যে পথে গেছেন , সেই পথ অনুসরণ করতে হবে। আর সর্বোপরি কোনরূপ ঋণ থাকা চলবে না। এগুলো সঠিকভাবে মেনে চললে তবেই জীবনে সুখী থাকা যাবে।।