৩ টি বাংলা শিক্ষামূলক গল্পঃ আজ এখানে এমন ৩ টি বাংলা শিক্ষামূলক গল্প আলোচনা করব যেগুলো আমরা হয়তো অনেকেই জানি। কিন্তু আমার কাজ হল আবার একবার আপনাদের গল্পগুলো স্মরণ করিয়ে দেওয়া, যাতে আপনারা নিজেরা সঠিক পথে চলতে পারেন, আর অন্যদের সঠিক পথে চলতে সাহায্য করতে পারেন। Let’s Start Reading 3 Motivational Stories……..
৩ টি বাংলা শিক্ষামূলক গল্পঃ নং- ১ঃ দায়িত্ব পালনঃ
শহরের এক নামকরা কোম্পানির মালিক সুরঞ্জনবাবু। তিনি খুব বিখ্যাত ছিলেন তাঁর সততা, দায়িত্বশীলতা এবং কর্মচারীদের প্রতি তাঁর সদয় আচরণের কারণে । তিনি যেমন তাঁর কর্মচারীদের ভালবাসতেন , তেমনি তাঁর কর্মচারীরাও তাঁকে খুব ভালবাসত।
প্রতিদিনের মতোই , একদিন সুরঞ্জনবাবু অফিস থেকে তাঁর গাড়ি নিয়ে বেরোবার সময় অফিসের দরজার দারোয়ান তাঁর গাড়ি আঁটকে দেয়। সুরঞ্জনবাবুকে অবাক করে দারোয়ান বলে, ” বাবু, আজ আপনি এই গাড়ি নিয়ে বেরবেন না, আজ আপনার এই গাড়ির Accident হবে।”
সুরঞ্জনবাবু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি জানলে কিভাবে?
“বাবু আমি এইমাত্র স্বপ্নে দেখলাম।”
সুরঞ্জনবাবুর গাড়ির চালক হাসতে লাগল । সে বলল, ” স্যার, চলুন , আপনার দেরি হয়ে যাবে , স্বপ্ন আবার সত্যি হয় নাকি!”
“ আমার স্বপ্ন সত্যি হয়।” — দারোয়ান বলল। “স্যার, আপনার উপর অনেক লোক নির্ভরশীল। আপনার যদি কিছু হয়, আমরা পরিবার নিয়ে পথে বসব। স্যার , দয়া করে এখন আপনি যাবেন না। আমার অনুরোধটা রাখুন।”
সুরঞ্জনবাবু অনেক ইতস্তত করার পর চালককে বললেন ,” ঠিক আছে , আজ তুমিই বরন ফাইলটা হায়ার অফিসে পৌঁছে দাও, আজ আমি আর যাচ্ছি না। ওখানে পৌঁছে তুমি আমাকে একটা ফোন করবে।” … এই কথা বলে সুরঞ্জনবাবু নিজের চেম্বারে ফিরে গেলেন।
এক ঘণ্টা পর সুরঞ্জনবাবুর অফিসে একটা ফোন এলো । ফোনের অপর প্রান্ত থেকে জানানো হল সুরঞ্জনবাবুর গাড়িটা Accident করেছে, Driver গুরুতর ভাবে আহত হয়েছে ।
এটা শোনার পর সুরঞ্জনবাবু কাঁপতে লাগলেন । তিনি কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থাকলেন এবং মনে মনে দারোয়ানকে ধন্যবাদ জানালেন। তিনি ভাবলেন , এক দারোয়ান আর তার স্বপ্ন আজ তাঁর জীবন বাঁচিয়ে দিল ।
তিনি দারোয়ানকে ডেকে পাঠালেন । দারোয়ান তাঁর চেম্বারে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে পরলেন , তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “ আজ আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ। তুমি আজ আমার প্রাণ বাঁচিয়েছ । এই নাও , এতে এক লক্ষ টাকা আছে, এটা তোমার পুরষ্কার ।” এই বলে তিনি তার হাতে একটা খাম বারিয়ে দিলেন। তিনি আরও বললেন, “তুমি যে আমাকে এতো ভালোবাসো তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ । আমি তোমাকে চিরকাল মনে রাখব, তবে কাল থেকে তুমি আর অফিসে আসবে না, তোমাকে আমি চাকরি থেকে বরখাস্ত করলাম।”
এই কথা শুনে দারোয়ানের মাথায় বাজ পরল। সে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, স্যার আমার দোষ?
সুরঞ্জনবাবু বললেন, ” তোমার দোষ, তুমি তোমার দায়িত্ব ঠিকঠাক পলন করছিলে না, অফিসের কাজের সময় তুমি ঘুমাচ্ছিলে, তাই তোমাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করছি।”
শিক্ষাঃ আমরা যে কাজের জন্য নিযুক্ত , যে কাজ করার জন্য আমরা উপযুক্ত পারিশ্রমিক পাই , আমাদের উচিত সেই কাজটি আগে ঠিকঠাক করে করা। আমার অন্যান্ন চারিত্রিক গুণাবলী যতই ভাল হোকনা কেন, আমি যদি দায়িত্বশীল না হই , তাহলে ঐ ভাল গুণগুলো জীবনে কোন কাজেই আসে না। তাই আমাদের দায়িত্ববান হওয়া উচিৎ ।
আরও পড়ুন … … … সফলতার সূত্রঃ 1 গল্প থেকে অনুপ্রেরণাঃ
৩ টি বাংলা শিক্ষামূলক গল্পঃ নং- ২ঃ ভাগ্য কি?
এক চিরিয়াখানায় একটা উটের বাচ্চা তার মা কে জিজ্ঞাসা করল, মা আমাদের পিঠে উচু মত এটা কি?
তার মা জবাব দিল, বাবা, এটাকে কুঞ্জ বলে। মরুভূমিতে আমাদের অনেক দূর যেতে হয়, আর অনেক সময় অনেক দূর পর্যন্ত জলের কোন চিহ্ন দেখা যায় না। তাই পানীয় জলের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে আমরা জল সঞ্চয় করে রাখতে পারি, যা প্রয়োজনে আমরা কাজে লাগাতে পারি।
বাচ্চা উট বলল, বা দারুন ব্যাপার! আচ্ছা মা, আমাদের পাগুলো এত লম্বা লম্বা কেন?
মা উট বলল, বাবা, মরুভূমিতে আমাদের অনেক দূর যেতে হয়, তাই যাতে অত দূরে যেতে আমাদের কোন কষ্ট না হয় তার জন্য আমাদের পা এত লম্বা।
বাচ্চা উট আবার বলল , মা, আমাদের নাকে, চোখে এত বড়বড় লোম কেন?
মা হাসতে হাসতে জবাব দিল , বাবা, মরুভূমিতে মাঝে মধ্যেই বালুঝড় হয়। বালি যাতে আমাদের চোখে- নাকে ঢুকে না যায় তার জন্য প্রকৃতি আমাদের নাকে- চোখে এত বড়বড় লোম দিয়েছে।
এবার বাচ্চা উট বলল, মা আমি একটা কথা বুঝতে পারছি না, প্রকৃতি আমাদের কুঞ্জ দিয়েছে জল সঞ্চয় করে রাখার জন্য, লম্বা লম্বা পা দিয়েছে মরুভূমিতে অনেক দূর যাবার জন্য, বড়বড় লোম দিয়েছে বালির হাত থেকে বাঁচার জন্য, তাহলে, আমরা এখানে চিড়িয়াখানায় কি করছি?
শিক্ষাঃ আপনি যতই Quality সম্পন্ন হন না কেন, যদি আপনি সঠিক জায়গায় না থাকেন তবে আপনি ভাগ্যবান নন। ভাগ্য কি? সঠিক সময়ে, সঠিক জায়গায় , সঠিক লোকেদের মধ্যে থাকাকেই ভাগ্য বলে।
আরও পড়ুন … … … অহংকার পতনের কারনঃ শ্রেষ্ঠ অনুপ্রেরণার গল্পঃ
৩ টি বাংলা শিক্ষামূলক গল্পঃ নং- ৩ঃ দেবতা ও রাক্ষসঃ
একবার রাক্ষস ও দেবতারা স্বর্গের অধিকার কার হওয়া উচিত তা নিয়ে তর্ক করতে থাকল । বিচারের জন্য তারা ব্রম্ভার কাছে গেল। ব্রম্ভা বললেন, কি তোমরা সবসময় নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করো ? আজ যুদ্ধ না করে আমি বলতে চাই স্বর্গের অধিকার কার থাকবে।
রাক্ষস ও দেবতারা একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে থাকল। ব্রম্ভা বললেন, ঐ যে খাবারের ঘর দেখছ, ওখানে কিছু খাবার রাখা আছে। ওই খাবার খেয়ে যারা শেষ করতে পারবে তারা স্বর্গের অধিকার পাবে। তবে একটা শর্ত আছে, খাবার সময় কেউ নিজের হাত বাঁকাতে পারবে না, হাত সোজা করে খেতে হবে।
রাক্ষসরা প্রথমে খাবার ঘরে গেল । তারা হাতে করে খাবার তুলল , কিন্তু যেহেতু হাত বাঁকাতে পারল না, তাই কেউই খাবার মুখে তুলতে পারল না। তারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে এল।
এরপর দেবতারা খাবার ঘরে ঢুকল । তারা দুভাগে ভাগ হয়ে দুটো সারিতে দাঁড়ালো । একজন হাতে করে খাবার তুলে হাত না বাঁকিয়েই অপর জনকে খাইয়ে দিল । এইভাবে সমস্ত খাবার তারা শেষ করল।
ব্রম্ভা দেবতাদের বিজয়ী ঘোষণা করে তাদের স্বর্গের অধিকার দিলেন।
আরও পড়ুন … … … 10 টি best শিক্ষামূলক গল্প
শিক্ষাঃ যিনি অন্যকে দিতে জানেন তিনি দেবতা, আর যে শুধুই নিজের কথা ভাবে, সে রাক্ষস।