পুরাণের 1 টি best গল্প- উদারতা দেখান- show your kindness

পুরাণের 1 টি best গল্প- উদারতা দেখান : সমস্যা হল জীবনের এক অবিচ্ছেদ্দ অঙ্গ। আমাদের প্রত্যেককেই জীবনে কোন না কোন সময় সমস্যার সন্মুখীন হতে হয় এবং তা সমাধানের চেষ্টাও  করতে হয়। কিন্তু আপনি চাইলেও সবার সমস্যা সমাধান করতে পারবেন না, অবশ্য লোকে সেটা আপনার কাছ থেকে আশাও করে না। কিন্তু লোকে যা চায় তা হল আপনার কাছ থেকে একটু সহানুভুতি , একটু উদারতা, যা তার সমস্যা সমাধানের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ । তাই উদারতা দেখান show your kindness. 

একটু সহানুভুতি মানুষের মনে আশা জাগায়। এটা মানুষকে ভরসা দেয় যে তারা ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য এবং তাদের খারাপ সময়ে কেউ না কেউ তাদের পাশে আছে। অপরদিকে কেউ কেউ আবার এই সহানুভুতি দেখানোটাকে তাদের অপমান করা হচ্ছে বলে মনে করে। এটা তারা মেনে নিতে পারে না। যারা উদারতা দেখায় , এরা তাদের শত্রু মনে করে। কিন্তু এসব ভুলে আমরা যদি মনে একটু উদারতা , একটু সহানুভুতি আনতে পারি তবে অনেক কঠিন সমস্যাও সহজে সমাধান করা সম্ভব হবে। সুতরাং, আসুন, পুরাণের একটি best গল্প – উদারতা দেখান থেকে শিক্ষা নেওয়া যাক … ..

 

পুরাণের 1 টি best গল্প- উদারতা দেখান : মাতালি ও গরুড়ের কাহিনী :

 

 

পুরাণের 1 টি best গল্প- উদারতা দেখান
পুরাণের 1 টি best গল্প- উদারতা দেখান

 

পুরাণের 1 টি best গল্প- উদারতা দেখানঃ  মাতালি ছিল স্বর্গের রাজা ইন্দ্রের সারথী। তার মত দক্ষ ও প্রভুভক্ত সারথী সে সময় স্বর্গরাজ্যে আর কেউ ছিল না। একদিন মাতালি নারদমুনিকে  বলল, ” বেশ কিছুদিন ধরে আমি খুব চিন্তায় আছি। আপনিই পারেন আমার এই চিন্তা দূর করতে।” 

নারদ তার চিন্তার কারন জানতে চাইলেন । 

 

মাতালি বলল, ” আপনি তো জানেনই আমার এক বিবাহযোগ্য কন্যা আছে। রূপে , গুণে তার তুল্য রমনী আর একটিও নেই। আমি অনেক চেষ্টা করেও তার তুল্য পাত্র খুঁজে পাচ্ছি না। আপনি তো স্বর্গ , মর্ত , পাতাল ঘুরে বেড়ান , দয়া করে আমার কন্যার এক উপযুক্ত পাত্র জোগাড় করে দিন।” 

 

নারদমুনি একটু হাসলেন । তিনি বললেন, ” বেশ চল তাহলে।” এই বলে তিনি মাতালির হাত শক্ত করে ধরলেন। কিছুক্ষন পর তারা পাতাল লোকে প্রবেশ করলেন । মাতালি আগে কখনও পাতাল লোকে আসে নি। সে চারিদিকে দেখতে লাগল। নরদমুনি  মাতালিকে তার নাগবন্ধু আজোকার সাথে  পরিচয় করিয়ে দিল। আজোকা ইন্দ্রের সারথী মাতালির খুব প্রশংসা করল। কিন্তু মাতালির মনে হল আজোকা কোন সমস্যার মধ্যে আছে, কারন তাকে একটু বিমর্ষ লাগছে। 

 

দুপুরে একসাথে খাবার খাওয়ার পর আজোকা তার নাতিকে তাদের সাথে গল্পে যোগ দিতে বলল। ঘর থেকে এক ভদ্র, নম্র, সুদর্শন যুবক , আজোকার নাতি সুমুখা বেরিয়ে এল। 

তাকে দেখেই মাতালি বুঝতে পারল যে নারদ্মুনি তার কন্যার জন্য এই ছেলেকেই নির্বাচন করেছেন। সে নারদ্মুনির দিকে প্রসন্ন চিত্তে তাকিয়ে থাকল। নারদ্মুনি ইশারায় তাকে তার কন্যার বিবাহের প্রস্তাব দিতে বলল। 

 

মাতালি বলল, ” গুনাকেশি নামে আমার এক কন্যা আছে, যে খুব গুণবতী ও রূপবতী । আমার মনে হয় সে আপনার নাতি সুমুখার উপযুক্তা পাত্রী হবে। আমি খুশি হব যদি আপনি চারহাত এক করার অনুমতি দেন।”                       (পুরাণের 1 টি best গল্প- উদারতা দেখান) 

একথা শুনে আজোকা ও সুমাখার মুখ খুব করুণ হয়ে উঠল । তা দেখে নারদ বললেন, “কি ব্যপার ? আপনাদের এত বিষণ্ণ দেখাচ্ছে কেন?” 

 

পুরাণের 1 টি best গল্প- উদারতা দেখান
পুরাণের 1 টি best গল্প- উদারতা দেখান

 

“আমি এই প্রস্তাবে রাজি হতে পারছি না, কারন বিষ্ণুর বাহন গরুড় ।” আজোকা করুণ স্বরে বলল। সে বলে চলল,   “আপনারা নিশ্চয় সেই গল্পটা শুনে থাকবেন , যেখানে গরুড় তার মা’কে নাগেদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য দেবতাদের কাছ থেকে অমৃতের পাত্রটা চুরি করে নিয়েছিল। কিন্তু ইন্দ্রের বুদ্ধিতে অমৃতের পাত্র আমাদের হাতে পৌঁছাল না। উপরন্তু নাগেরা হয়ে উঠল গরুড়ের পরম শত্রু। ইন্দ্রের আশীর্বাদে নাগেরা হল গরুড়ের স্বাভাবিক খাদ্য। এরপর থেকে গরুড় তার ইচ্ছামত যখন তখন নাগকুল ধ্বংস করতে থাকে। কোন উপায় না দেখে আমি গরুড়ের সঙ্গে চুক্তি করতে বাধ্য হই। চুক্তি অনুযায়ী আমাকে প্রতি মাসে একটি করে নাগ খাদ্য হিসাবে গরুড়ের কাছে পাঠাতে হয়। আগামী মাসে সুমাখার পালা।” 

 

একথা শুনে মাতালির জেদ চেপে যায় । সে বলে, ” তাহলেও আমি আমার মেয়ের সাথে সুমাখার বিয়ে দেব।”

সে সুমাখাকে সঙ্গে নিয়ে স্বর্গে এল এবং ইন্দ্রের সামনে হাজির হল। ইন্দ্র তাকে দেখে খুব খুশী হল। ইন্দ্র মাতালিকে খুব ভালবাসত, কারন , মাতালি ছিল তার এক প্রিয় বন্ধু যে অনেক যুদ্ধে তাকে জিততে সাহায্য করেছে। 

মাতালি বলল, ” প্রভু , আপনি তো জানেন, আমি আমার কন্যার জন্য একজন উপযুক্ত পাত্র খুঁজছিলাম । এই দেখুন, এ হল সুমাখা, এই আমার কন্যার উপযুক্ত পাত্র।” 

 

ইন্দ্র খুব খুশী হল। কিন্তু মাতালি যখন সমস্যার কথা বলল, তখন ইন্দ্র খুব চিন্তায় পরে গেল। কারন সে বুঝতে পেরেছিল মাতালি এবার তার কাছ থেকে এক ফোঁটা অমৃত চাইবে । 

সত্যি সত্যিই মাতালি বলল , ” আমি আপনাকে অনুরোধ করছি  , আপনি সুমাখাকে এক ফোঁটা অমৃত দান করুন।”

 

ইন্দ্র বিপদে পরে গেল। সে গরুড়কে কখনই রাগাতে চায় না। কারন কিছুদিন আগেই গরুড় ইন্দ্রের উপর রেগে গিয়ে স্বর্গরাজ্য ধংস করেছিল। এদিকে সে মাতালিকেও দুঃখ দিতে চাইছিল না। কিভাবে সে তার বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীকে না বলবে! শীঘ্রই তাকে কোন সিদ্ধান্ত নিতে হবে— হয় মাতালিকে প্রত্যাক্ষান করে নিজেকে গরুড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে, অথবা মাতালিকে সাহায্য করে গরুড় কি করে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। 

অবশেষে বন্ধুত্বেরই জয় হল। ইন্দ্র সুমাখাকে অমৃত দেবার সিদ্ধান্ত নিল। মাতালি অমৃতের পাত্র ইন্দের কাছ থেকে নিতে যাবে, এমন সময় গরুড় এসে উপস্থিত হল।

 

সে বলল ,” এটা কি হচ্ছে?”

ইন্দ্র ইতস্তত করে জবাব দিল, ” আমি সুমাখাকে এক ফোঁটা অমৃত দিচ্ছি।”

” যদিও তুমি জানো যে , ও আগামী মাসে আমার খাদ্য হতে চলেছে ! তুমি কি আমার সাথে আবার যুদ্ধ করতে চাও ? তুমি কি পরাজয়ের সাধ ভুলে গেছ? আমার ক্ষমতা কতটা তা কি তোমার স্মরণে নেই?” গরুড় চিৎকার করে বলে চলল , ” আমি হলাম ভগবান বিষ্ণুর বাহন। আমার একটা পালক ও এই পৃথিবীকে বহন করার ক্ষমতা রাখে!” 

 

পুরাণের 1 টি best গল্প- উদারতা দেখান
পুরাণের 1 টি best গল্প- উদারতা দেখান

 

“গরুড় … … … ” একটা শান্ত স্বর ভেসে এল। গরুড় সঙ্গে সঙ্গে তার ভাষণ থামাল। সে বুঝতে পারল এটা তার প্রভুর গলার শব্দ। ” কেন তুমি তোমার ক্ষমতার জাহির করছ?” 

ভগবান বিষ্ণু তার একটা হাত গরুড়ের পিঠে রাখলেন। কিন্তু গরুড় , যে কিনা সারা পৃথিবীকে তার পিঠে বহন করতে পারে, সে, একটা হাতের ভার সামলাতে না পেরে পরে গেল। নিরুপায় হয়ে সে তার প্রভুর দিকে তাকাল। 

 

ভগবান বিষ্ণু বললেন, ” গরুড় তুমি সত্যিই শক্তিমান এবং ক্ষমতাশালী , কিন্তু তুমি খুব উদ্ধ্বত হয়ে উঠেছ । তুমি আমাকে বহন করতে পার,  কারন  আমি তোমাকে বহন করার অনুমতি দিই তাই। আমি না চাইলে তুমি কখনই আমাকে বহন করতে পারতে না।”

গরুড় তার ভুল বুঝতে পারল। তার চোখ বেয়ে জল নেমে এল।

” ইন্দ্র তোমাকে অপমান করতে চায়নি। তোমার তো খাবার মত অনেক নাগ আছে! তোমার ভয়ে ইন্দ্র কি তার বন্ধুকে একটু সহানুভুতিও দেখাতে পারবে না!” 

গরুড় তার প্রভুর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরল। সে ইন্দ্রর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করল। ইন্দ্র হাসল এবং সুমাখাকে অমৃত প্রদান করল।। 

পুরাণের 1 টি best গল্প- উদারতা দেখান: মাতালি ও গরুড়ের কাহিনী থেকে শিক্ষা :

 

মাতালি ইন্দ্রের কাছ থেকে সুমাখার জন্য একটু সহানুভুতি চাইছিল , এবং ইন্দ্রও চাইছিল মাতালিকে তার বন্ধুত্বের প্রতিদান দিতে। কিন্তু গরুড় ইন্দ্রের এই মহানুভবতাকে অপমান হিসাবে নিল। তাই সে ভগবান বিষ্ণুর কাছে বকুনি খেল। সর্বদায় একে অপরের প্রতি সহানুভুতি দেখান উচিত , তবেই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।। 

 

আরও পড়ুন … … … ৩ টি বাংলা শিক্ষামূলক গল্পঃ 3 Best Motivational Story:

 

Leave a Comment

Solverwp- WordPress Theme and Plugin