বিচক্ষণতা নিয়ে 2 টি শিক্ষণীয় গল্প best story

বিচক্ষণতা নিয়ে 2 টি শিক্ষণীয় গল্পঃ বিচক্ষণতা মানুষের একটা সেরা গুণ। বিচক্ষণ ব্যক্তিরা সমাজে এক আলাদা মর্যাদা পেয়ে থাকেন। তাঁকে প্রত্যেকে সম্মান ও স্নেহ করে। আবার বিচক্ষণতার অভাবে আমরা অনেক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি না, কোনটা ঠিক বা কোনটা ভুল তা আলাদা করতে পারি না। বর্তমানে অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই বিচক্ষণতার অভাব আছে। তাই ধীরে ধীরে সমাজ রসাতলে যাচ্ছে । আমাদের সমাজকে বাঁচাতে হলে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে, আমাদের সন্তানকে বিচক্ষণ করে তুলতে হবে, তাদেরকে ভেবেচিন্তে কাজ করার বা কোন সিদ্ধান্ত নেবার পরামর্শ  দিতে হবে। আসুন নিচের বিচক্ষণতা নিয়ে 2 টি শিক্ষণীয় গল্প থেকে শিক্ষা নেওয়া যাক … … … … … …

 

বিচক্ষণতা নিয়ে 2 টি শিক্ষণীয় গল্পঃ (১) ঈশ্বরের জুতো

 

বিচক্ষণতা নিয়ে 2 টি শিক্ষণীয় গল্পঃ ঈশ্বরের জুতো
বিচক্ষণতা নিয়ে 2 টি শিক্ষণীয় গল্পঃ ঈশ্বরের জুতো

 

বিচক্ষণতা নিয়ে 2 টি শিক্ষণীয় গল্পঃ (১) ঈশ্বরের জুতোঃ এক রাজা একদিন রাজসভায় তাঁর মন্ত্রীকে বললেন , “মন্ত্রী, তুমি আমাকে বলতে পারবে যে আমার রাজ্যে বিচক্ষণ মানুষের সংখ্যা কত?”

মন্ত্রী বললেন, “হুজুর পারব, তবে তা গণনা করার জন্য আমার ৫ দিন ছুটি লাগবে।”

রাজা মন্ত্রীর ছুটি মঞ্জুর করলেন।

 

ছুটি নিয়ে মন্ত্রী রাজ্যের সবচেয়ে দক্ষ এক মুচির কাছে গিয়ে বললেন, ” আমার এক হাত লম্বা আর এক বিঘৎ চওড়া এক জোড়া জুতো লাগবে, বানিয়ে দাও। ওতে কিছু হীরে জহরত , মণি মাণিক্য লাগিয়ে দেবে, আর সোনার সুতো দিয়ে সেলাই করবে। যা খরচ হবে তাই পাবে। এখন আগাম কিছু টাকা রাখো।” —— এই বলে মন্ত্রী মুচির হাতে কিছু স্বর্ণমুদ্রা গুঁজে দিলেন।

মুচি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেল এবং বলল, ” ঠিক আছে , কাল এসে জুতো জোড়া নিয়ে যাবেন “

 

পরের দিন মন্ত্রী মুচির কাছে এসে সুন্দর কিন্তু আকারে বেশ বড় জুতো জোড়া নিলেন এবং মুচিকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিলেন যে, এই জুতোর কথা সে কাউকে জানাবে না।

 

এরপর মন্ত্রী একপাটি জুতো নিজের কাছে রেখে অন্যটি সবার অলক্ষ্যে একটি মন্দিরের সামনে সিঁড়ির নিচে ফেলে রাখলেন।

 

সকালে মন্দিরের পুরোহিত মন্দিরে এসে ওই একপাটি জুতো আবিষ্কার করে উত্তেজিত হয়ে উঠলেন । তিনি ভাবতে থাকলেন , এত বড় জুতো কখনও কোন মানুষের পায়ের হতে পারে না! আর এই জুতোয় যা হীরা জহরত লাগানো আছে, তাতে নিশ্চয়ই  রাতে  স্বয়ং ঈশ্বর মন্দিরে এসেছিলেন, এবং রাতে ভুল করে একপাটি জুতো ফেলে গেছেন।

 

পুরোহিত জুতোটি বারবার মাথায় ঠেকিয়ে প্রণাম করতে লাগলেন । মন্দিরে বহু লোকের সমাগম ঘটল , আর পুরোহিত সবাইকে ঈশ্বরের জুতো পাওয়ার গল্প শোনাতে লাগলেন । সকলে একবাক্যে স্বীকার করল , নিশ্চয় এই জুতো ভগবানেরই হবে, মানুষের পায়ের মাপ এত বড় হতেই পারে না! আর মন্দিরের বাইরে যখন পাওয়া গেছে, তখন নিশ্চয়ই এটা শয়তানের জুতো নয়। সবাই জুতোটিকে হাতে নিয়ে , মাথায় ঠেকিয়ে প্রণাম করতে থাকল। 

 

নিমেষেই এই জুতোর কথা রাজ্যময় ছড়িয়ে পড়ল । জুতোটিকে একটিবার হাতে স্পর্শ করার জন্য হুড়োহুড়ি পরে গেল। শেষ পর্যন্ত জুতোর কথা রাজার কানেও গেল। তিনি জুতোটি রাজ দরবারে আনার আদেশ দিলেন। 

 

সব দেখেশুনে রাজামশাইও স্বীকার করলেন, “এ জুতো ঈশ্বরের না হয়ে পারে না!” তিনি জুতোটি বারবার প্রণাম করতে আর চুমু খেতে লাগলেন । তিনি আদেশ দিলেন, ” এই জুতো কোন পবিত্র স্থানে যত্ন ও নিরাপত্তার সঙ্গে সংরক্ষণ করা হোক। ” 

 

প্রতিদিন হাজার হাজার লোক জুতো দেখতে ভিড় জমাতে লাগল । অনেকে রোগমুক্তি সহ বিভিন্ন কিছু পাবার আশায় মানত করা শুরু করল। জুতোর পাশে দানবাক্স রাখা হল। —– সে এক এলাহি ব্যপার! 

 

পাঁচ দিন পর মন্ত্রী রাজসভায় এলেন। তিনি রাজাকে প্রণাম জানিয়ে চুপচাপ বসে থাকলেন , একটি কথাও বললেন না। 

রাজা প্রশ্ন করলেন, “কি হল মন্ত্রী, তুমি এত বিরসবদন কেন?” 

মন্ত্রী মাথা নিচু করে বললেন, ” মহারাজ! আমার বাড়ি থেকে একপাটি জুতো চুরি গেছে, তাই আমার মন খারাপ।” 

“একপাটি জুতো?” রাজা আকাশ থেকে পড়লেন । 

“হ্যাঁ , আমার প্র-পিতামহের একটা হীরে জহরত দেওয়া জুতো চুরি গেছে, পালানোর সময় চোর একপাটি ফেলে গেছে।”

“ওই জুতো কি তোমার কাছে আছে?” রাজা সঙ্গে সঙ্গে বললেন।

“হ্যাঁ , আমার কাছেই আছে।” মন্ত্রী ঝোলার ভিতর থেকে জুতোর পাটি বের করে সবাইকে দেখালেন। 

 

জুতো দেখে তো রাজার মাথা ঘুরতে আরম্ভ করল। রাজামশাই নিজের কপালে করাঘাত করে হুকুম দিলেন মন্দির থেকে এখুনি জুতোর পাটিটি নিয়ে আসতে। তারপর উচ্চস্বরে বলতে লাগলেন, ” ছি! ছি! আমরা  তো এক একটা মূর্খের দল! আমরা এটাকে  ঈশ্বরের জুতো মনে করে মাথায় করে রেখেছি!” 

 

মন্ত্রী মৃদু হেসে বললেন, ” রাজামশাই, আপনি আমাকে রাজ্যের বিচক্ষণ মানুষের সংখ্যা গুণতে বলেছিলেন। এখন আশা করি আপনি বুঝতে পারছেন যে রাজ্যে একজনও বিচক্ষণ লোক নেই।” 

রাজার বুঝতে অসুবিধা হল না যে, এসমস্ত কিছুই মন্ত্রীর পরিকল্পনা। রাজামশাই মনে মনে মন্ত্রীর বুদ্ধির প্রশংসা করতে লাগলেন। 

 

শিক্ষাঃ

গল্পটা বিচক্ষণতা নিয়ে একটা দারুন শিক্ষা দিয়ে যায় । আমরা ধীরে ধীরে আমাদের বিচক্ষণতা হারিয়ে ফেলছি। চোখের সামনে যা কিছু দেখছি তা সহজেই বিশ্বাস করে নিচ্ছি । কোন কিছুই বুদ্ধিমত্তার সাথে যাচাই করছি না। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে মানুষ এতটাই নির্বোধ , কুসংস্কারাচ্ছন্ন এবং ধর্মান্ধ হয়ে যাবে যে, সে ভালো- মন্দ, ঠিক -বেঠিক ফারাক করতে পারবে না। আর এভাবেই আমাদের সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই আমাদের সর্বদাই বিচক্ষণতার সাথে কাজ করা উচিত।। 

 

আরও পড়ুন … … … ধৈর্যের সুফল নিয়ে 1 টি গল্প best Bangla story 

 

বিচক্ষণতা নিয়ে 2 টি শিক্ষণীয় গল্পঃ (২) উটের ভাগাভাগি

 

বিচক্ষণতা নিয়ে 2 টি শিক্ষণীয় গল্প: উটের ভাগাভাগি
বিচক্ষণতা নিয়ে 2 টি শিক্ষণীয় গল্পঃ উটের ভাগাভাগি

 

বিচক্ষণতা নিয়ে 2 টি শিক্ষণীয় গল্পঃ (২) উটের ভাগাভাগিঃ এক ব্যবসায়ীর কাছে প্রচুর ধনসম্পত্তি ছিল। কিছুদিন যাবত তাঁর শরীর ভাল যাচ্ছিল না। তাই তিনি তাঁর  স্থাবর- অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তি তাঁর তিন ছেলেমেয়েকে ভাগ করে দেবার চিন্তাভাবনা করলেন । 

তিনি এক উকিল ডেকে তাঁর সম্পত্তির একটা উইল বানালেন। উইলে লিখলেন যে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর সমস্ত সম্পত্তির ১/২ অংশ পাবে তাঁর বড় সন্তান, ১/৩ অংশ পাবে তাঁর মেজো সন্তান আর ১/৯ অংশ পাবে তাঁর ছোট সন্তান। 

 

একদিন ব্যবসায়ীর মৃত্যু ঘটল । উকিল ব্যবসায়ীর তিন সন্তানকে ডেকে উইলের কথা জানালেন এবং সেইমতো সমস্ত সম্পত্তি ভাগাভাগি করে দিলেন। কিন্তু সমস্যা দেখা গেল কিছু উট নিয়ে, যেগুলি ব্যাবসায়ী তাঁর ব্যবসার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতেন। সেখানে মোট উটের সংখ্যা ছিল ১৭ টি । উকিল কোনভাবেই ১৭ টা উটকে ১/২, ১/৩ আর ১/৯ অংশে ভাগ করতে পারলেন না। আর এটা সম্ভবও নয়। তিনি পড়ে গেলেন মহা বিপদে! 

 

উটগুলিকে উইল অনুযায়ী ভাগ করে দেবার জন্য উকিল বিভিন্ন জ্ঞানী লোকের পরামর্শ নিলেন, কিন্তু কোন সুরাহা হল না। 

অবশেষে একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি সাহায্য করতে এগিয়ে দিলেন। তিনি ছিলেন পেশাগত  ভাবে একজন উটের  ব্যবসায়ী। তিনি মন দিয়ে উকিলের কথা শুনলেন এবং বেশ কিছুক্ষন চিন্তা করে তাঁর উট থেকে একটা উট উকিলকে দিয়ে বললেন, “বাবু, আমার এই একটা উট নিন , আর ওনাদের ওই ১৭ টা উটের সঙ্গে মিশিয়ে দিন । এবার আপনি উইল অনুযায়ী ভাগাভাগি করুন।” 

 

এবার উকিল ভাগ করতে শুরু করলেন। এখন উকিলের কাছে ১৭+১= ১৮ টা উট আছে। তার ১/২ অংশ অর্থাৎ ৯ টা উট তিনি বড় সন্তানকে দিলেন। ১৮ টা উটের ১/৩ অংশ অর্থাৎ ৬ টা উট মেজো সন্তানকে দিলেন এবং ১৮ টা উটের ১/৯ অংশ অর্থাৎ ২ টো উট ছোট সন্তানকে দিলেন। অর্থাৎ মোট উটের সংখ্যা হল ৯+৬+২ = ১৭। যে একটা উট পরে থাকল তা তো উট  ব্যবসায়ীর উট , তিনি সেটা ফিরত নিয়ে চলে গেলেন। এইভাবে সহজেই বিচক্ষণতার সঙ্গে এক কঠিন সমস্যার সমাধান সম্ভব হল।

 

শিক্ষাঃ

বিচক্ষণ ব্যক্তির কাছে কোন কাজই কঠিন নয়। যদি বুদ্ধি খাটিয়ে , বিচক্ষণতার সঙ্গে চিন্তাভাবনা করা যায় , তবে সমস্ত সমস্যার সমাধান সম্ভব।। 

 

আরও পড়ুন … … ….. উদারতা দেখান show your kindness : পুরাণের 1 টি best গল্প 

 আরও পড়ুন … … … … ***** জীবন বদলানোর 1 টি অসাধারণ গল্প *****

 

 

Leave a Comment

Solverwp- WordPress Theme and Plugin