Bengali Motivational Story: মনের বন্ধনঃ

bengali-motivational-story-মনের-বন্ধনঃ  আমাদের অবনতি , বিপন্নতা , অসফলতা ইত্যদির মূল কারণ হল আমাদের এই মন, যা বন্ধনে আবদ্ধ । আমাদের মন এক  পুরাতন ও একঘেয়েমি ঐতিহ্যের জালে জড়িয়ে আছে, যেটা আমাদের সামনের দিকে এগোতে দিচ্ছে না। কিন্তু  এই বন্ধন হল কাল্পনিক, এর কোন অস্তিত্বই নেই। কেউ যদি এসে আমাদের এই কাল্পনিক বন্ধন ছিন্ন করে দেয়, তাহলে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারব। Let’s Start Reading the  bengali-motivational-story-মনের-বন্ধনঃ … … …

 

bengali-motivational-story-মনের-বন্ধনঃ

bengali-motivational-story-মনের-বন্ধনঃ  এক ব্যবসায়ি ও উটের গল্পঃ

 

বহুদিন আগের কথা। এক ব্যবসায়ি ছিল। তার কাছে পাঁচটা উট ছিল। ব্যবসায়ি উটের পিঠে জিনিসপত্র চাপিয়ে ঘুরে ঘুরে ব্যবসা করত। একবার জিনিসপত্র বিক্রি করে সে তার দেশে ফিরছিল, কিন্তু পথেই রাত্রি হয়ে যায় , ফলে সে একটা সরাইখানায় থাকতে বাধ্য হয় ।

সরাইখানার বাইরে একটা গাছের নীচে সে উটগুলিকে বাঁধতে শুরু করে , কিন্তু পঞ্চম উটটি বাঁধার মত দড়ি তার কাছে ছিল না। প্রথম চারটে উট গাছের সঙ্গে বাঁধার সাথে সাথে সেগুলো বসে পড়ে জাবর কাটতে শুরু করে। কিন্তু পঞ্চম উটটি , যেটি বাঁধা হয়নি, সেটা দাঁড়িয়ে থাকে। ব্যবসায়ি খুব চিন্তায় পরে যায় । উটটা না বাঁধলে সেটি রাতে কোথাও চলে যেতে পারে, এই ভেবে সে  ইতস্তত দড়ি খুঁজতে থাকে

সরাইখানার কাছাকাছি এক ফকিরবাবা বসেছিলেন। তিনি ব্যবসায়িকে অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছিলেন। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা  করলেন, কি ব্যাপার, কোন সমস্যায় পড়েছ ?

ব্যবসায়ি বলল, বাবা, উটের সুরক্ষার কথা ভেবে চিন্তায় আছি। আমার কাছে পাঁচটা উট আছে। কিন্তু বাঁধার জন্য চারটে দড়ি আছে, একটা দড়ি কোথাও হারিয়ে ফেলেছি। তাই একটা উটকে বাঁধতে পারছি না

ফকিরবাবা হেসে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তাহলে এখন কি করবে?

যাই , সরাইখানার মালিকের কাছ থেকে একটা দড়ি চেয়ে নিয়ে আসি, ব্যবসায়ি উত্তর দিল।

“তার কোন প্রয়োজন নেই । যাও চারটে উটকে যেভাবে বেঁধেছিলে, পঞ্চমটাকেও সেভাবেই বেঁধে আসো ।”

“কিন্তু দড়ি … … … ”

“আমি বললাম না, দড়ির কোন প্রয়োজন নেই । যাও , কল্পনার দড়ি দিয়ে উটটা বেঁধে দাও , অর্থাৎ , বাঁধার অভিনয় কর। ঠিক তেমন করে, যেমন করে তুমি প্রতিদিন বাঁধ । দেখবে ও কোথাও যাবে না।”

ব্যবসায়ি ফকিরের কথা মেনে নেয়, আর কাল্পনিক দড়ি দিয়েই উটকে বাঁধতে শুরু করে । প্রথমে উটের গলায় কাল্পনিক দড়ি পড়ায় , তারপর দড়িটা গাছের সাথে বেঁধে দেয় । আশ্চর্যের বিষয় হল, এই কাল্পনিক দড়ি বাঁধার সাথে সাথেই উটটা নিশ্চিন্তে বসে পরে। ব্যবসায়ি তার সামনে খাবার দিলে উটটা মজা করে খেতে শুরু করে।

ফকিরকে ধন্যবাদ জানিয়ে ব্যবসায়ি সরাইখানায় ঢুকে পরে। সেখানে রাতের খাবার খেয়ে  সে ঘুমিয়ে পরে । তার যে একেবারেই চিন্তা হয়নি , তা নয় । পঞ্চম উটটার কথা ভেবে তার মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছিল ।

সকাল হলে ব্যবসায়ি স্নান করে, জলখাবার খেয়ে সরাইখানার বাইরে আসে। সে পাঁচটা উটই আছে দেখে মনে মনে ফকিরবাবাকে ধন্যবাদ জানায়। এবার সে বাঁধা উটগুলোর দড়ি খুলে দেয়। দড়ি খোলার সাথে সাথেই উটগুলো উঠে পড়ে চলতে শুরু করে। কিন্তু পঞ্চম উটটি ওঠে না।  সে  উটটিকে ওঠানোর  অনেক চেষ্টা করে, এমনকি লাঠি দিয়ে মারতে থাকে, তবু সে ওঠে না।

সেই সময় ফকিরবাবা এসে বললেন ,  কি ব্যাপার, মূক প্রাণীর উপর এতো  অত্যাচার করছো  কেন ?

“দেখুন না বাবা! এই অলসটা ওঠার নামই করছে না!”

কিভাবে উঠবে ? ফকির হেসে বললেন, তুমিতো ওকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছ ।

কিন্তু আপনি তো জানেন আমি ওকে বাঁধিনি , বাঁধার অভিনয় করেছিলাম মাত্র

একদম ঠিক । যেমন বাঁধার অভিনয় করেছিলে, তেমনই খোলার অভিনয় কর , তারপর দেখো ও কিভাবে উঠে দাঁড়ায় ।

ব্যবসায়ি ঠিক তেমনটাই করে, প্রথমে গাছের থেকে কাল্পনিক দড়ি খোলার অভিনয় করে , তারপর আদর করে পিঠের উপর করাঘাত করে। 

উট শুধু ওঠেই না, দৌড়ে গিয়ে সাথিদের সাথে যোগ দেয় । ব্যবসায়ি দেখে অবাক হয়ে যায় ।

ফকিরবাবা বলেন, যেভাবে তুমি অদৃশ্য দড়ি দিয়ে উটকে বেঁধেছিলে বলে সে উঠতে পারছিল না, সেইভাবে মানুষের পায়েও অদৃশ্য দড়ি পরানো আছে, তাই সে এক জায়গায় পড়ে আছে, চলতে চায়না , এগোতে চায়না ।  তাই পৃথিবীতে এত দুঃখ, এত কষ্ট । এই কথাগুলো বলে ফকিরবাবা চলে যান । ব্যবসায়ি তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকেন । 

 

শিক্ষা

মন থেকে অসফল হবার কাল্পনিক ভয় দূর করুন । কারণ , এটা সেই কাল্পনিক দড়ি যা আমাদের বেঁধে রেখেছে এবং এগিয়ে যাবার পথে বাধার সৃষ্টি করছে । এই বন্ধন ছিন্ন করে এগিয়ে চলার জন্য প্রস্তুত হোন ।

 

Leave a Comment

Solverwp- WordPress Theme and Plugin