অহংকার ত্যাগ করুন – 1 টি গল্প থেকে শিক্ষা : আমরা প্রত্যেকেই জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই । অর্থ , যশ , সন্মান পেতে চাই , জীবনে উন্নতি করতে চাই । কিন্তু শুধুমাত্র চাইলেই জীবনে উন্নতি করা যায় না —- তার জন্য চায় পরিশ্রম । পরিশ্রম আর অধ্যাবসায় আমাদের স্বাভাবিক উন্নতি ঘটায় , আর এই উন্নতি আজীবন স্থায়ী হয়। অন্যদিকে, উন্নতি যদি স্বাভাবিক না হয়ে অন্য কোনও ভাবে হয়, যেমন অসৎ উপায়ে, বা পরিশ্রম ও অধ্যাবসায় ছাড়াই হয়, তবে সেক্ষেত্রে আমাদের মনে জন্ম নেয় অহংকার ।
মনে রাখতে হবে, জীবনে মান , সন্মান, প্রতিপত্তি অর্জন করে মাথা উঁচু করে চলা যেমন গুরুত্বপূর্ণ , তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল , নিজের উন্নতিতে অহংকার না করে নিজের পা দুটোকে সব সময় মাটিতে রাখা। তাই অহংকার ত্যাগ করুন , আসুন 1 টি গল্প থেকে শিক্ষা নেওয়া যাক … … …
অহংকার ত্যাগ করুন – 1 টি গল্প থেকে শিক্ষা (বিন্ধ্য পর্বতের অহংকার ) :
অহংকার ত্যাগ করুন – 1 টি গল্প থেকে শিক্ষাঃ বিন্ধ্য পর্বতমালা পৃথিবীর বিখ্যাত পর্বতগুলোর মধ্যে একটি। এখানকার জনজাতি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিন্ধ্য পর্বত দ্বারা উপকৃত । তাপ্তি ও ভেনা নদী বিন্ধ্য পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে পার্শ্ববর্তী অঞ্চল গুলোকে সুজলা, সুফলা করে তুলেছে। এর মধ্যেকার গভীর অরণ্য পশু পাখীর আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে । এখানকার গুহাগুলো বহু সাধু সন্নাসীর সাধনার জায়গা। তাই সাধারণ মানুষ বিন্ধ্য পর্বতকে শ্রদ্ধার চোখে দেখত আর দেবতাজ্ঞানে পূজা করত।
বছরের পর বছর সাধারণ মানুষের কাছ থেকে এইরূপ সন্মান পেয়ে একবার বিন্ধ্য পর্বত অহংকারী হয়ে উঠল । সে একদিন সূর্যকে বলে বসল , ” তুমি এবার থেকে আমার চারপাশ দিয়ে পৃথিবী প্রদক্ষিণ কর, মেরু পর্বতের চারপাশ দিয়ে নয়।” বিন্ধ্যর এই কথা শুনে সূর্য বেশ অবাক হল। তবে, যেহেতু সে খুব ভদ্র ও নম্র , তাই বিন্ধ্যর কথায় কর্ণপাত না করে তার স্বাভাবিক পথে চলতে লাগল।
বিন্ধ্য রাগে লাল হয়ে গেল। সে ভাবল, ” আমি সূর্যের কাছ থেকে এটুকু সন্মানও আশা করতে পারি না ! না কি, সূর্য আমার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা সহ্য করতে পারছে না !” সে সূর্যকে একটা উচিৎ শিক্ষা দিতে চাইল ।
বিন্ধ্য স্থির করল সে সূর্যের পথ আটকে দাঁড়াবে , সূর্যকে তার পথে যাতায়াত করতে দেবে না। এই ভেবে সে নিজেকে ক্রমাগত বৃদ্ধি করতে লাগল। এইভাবে বাড়তে বাড়তে সে সূর্যের পথ আটকে দাঁড়াল । বাধা পেয়ে দাঁড়িয়ে পরা ছাড়া সূর্যের কোনও উপায় থাকল না। ফলে সারা পৃথিবী অন্ধকারে ডুবে গেল, সূর্যালোকের অভাবে সমস্ত জীবজন্তু মারা যেতে লাগল ।
স্বর্গের দেবতারা চিন্তায় পরে গেল। তারা একত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিল যে, পৃথিবীর জীবকুলকে বাঁচাতে পারেন একজন ব্যক্তিই, তিনি আর কেউ নন, বিন্ধ্য পর্বতের গুরু মহাঋষি অগস্ত্য । দেবতারা সকলে মিলে ঋষি অগস্ত্যের কাছে গিয়ে পৃথিবীর বিপদের কথা বললেন।
সব কথা শুনে ঋষি অগস্ত্য কাল বিলম্ব না করে দেবতাদের সঙ্গে নিয়ে বিন্ধ্য পর্বতের দিকে যাত্রা শুরু করলেন। যখন বিন্ধ্য তার গুরুকে আসতে দেখল তখন সে খুব আনন্দিত হল। মনে মনে বলল, ” আমি খুব ভাগ্যবান! আজ আমার গুরু আমার সঙ্গে দেখা করতে আসছেন।” গুরুকে শ্রদ্ধা জানাতে বিন্ধ্য ঋষি অগস্ত্যের সামনে মাথা নত করে তাঁকে প্রণাম করতে করতে বলল, ” গুরুদেব , বলুন আমি আপনার কি সেবা করতে পারি?”
বুদ্ধিমান গুরুদেব সঙ্গে সঙ্গে আদেশ দিলেন, ” বিন্ধ্য, আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত তুমি এভাবেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাক।” এই বলে তিনি দ্রুত পায়ে সেই স্থান ত্যাগ করলেন।
বিন্ধ্য অবাক হয়ে গেল। কিন্তু গুরুর আদেশ অমান্য করা তার সাধ্যের বাইরে ছিল। তাই সে মাথা নিচু করে, তার গুরুর পুনরায় আগমনের আশায় দাঁড়িয়ে থাকল। সূর্য আবার তার পথে চলতে শুরু করল, পৃথিবী আবার আলোকিত হল এবং পৃথিবীতে প্রাণ ফিরে এল।
শিক্ষা : অহংকার ত্যাগ করুন – 1 টি গল্প থেকে শিক্ষা
এই গল্প থেকে দুটো শিক্ষা পাওয়া যায়।
(১) বিন্ধ্য পর্বতের মত, মান, সন্মান, যশ , প্রতিপত্তি অর্জন করে কখনও অহংকার করা উচিৎ নয়। সর্বদা সূর্যের মত ভদ্র ও নম্র হওয়া উচিৎ ।।
(২) প্রত্যেকের জীবনে একজন ভাল গুরু থাকা একান্ত জরুরী , যিনি আপনাকে কোথায় শিরদাঁড়া সোজা রাখতে হয় এবং কোথায় মাথা নিচু করতে হয় , শেখাবেন। আপনার মাথা নিচু করার মত কোন লোক যদি আপনার সামনে না থাকে , তবে আপনাকে অহংকারী হওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবে না।।
আরও পড়ুন … … ... অহংকার পতনের কারনঃ শ্রেষ্ঠ অনুপ্রেরণার গল্পঃ